বিগত কয়েক মাসের রাজনৈতিক সহিংসতা ও অবরোধের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি পোষাতে আয়কর ও ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রদানের ক্ষেত্রে আসছে বাজেটে ‘বিশেষ’ ছাড় দেয়ার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার (ডিসিসিআই)। তারা ফিক্সড ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রদানের ক্ষেত্রে অর্ধেক ছাড় দেয়া, বন্দরের চার্জ ও জরিমানা অর্ধেক কমানো, সব করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড দেয়ারও দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ভ্যাট আইনে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনের সভাপতি হোসেন খালেদ এসব দাবি উপস্থাপন করেন। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বলা হয়, ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদের কারণে ব্যবসায়ের ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও আস্থাহীনতা ও নানামুখী বাধায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে আসছে বাজেটে বিশ্ব ব্যাংকের নিয়মিত অর্থ সহায়তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদের যোগান বাড়াতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। এতে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।
সভায় কালো টাকার উত্স বন্ধ করা, করদাতার আওতা বাড়ানো, সব করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা এবং তাদের ভিআইপি বা সিআইপিদের ন্যায় সব ধরনের সরকারি সুবিধা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, চেম্বার ও ট্রেড বডির উপর কর প্রত্যাহার, অটোমোবাইল শিল্পের ক্ষেত্রে অ্যাসেম্বলিং কারখানাকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার দাবির পাশাপাশি আয়কর ও ভ্যাট আইনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা দূর করতে ১১টি প্রস্তাব দেয়া হয়।
এছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পৌনে তিন লাখ টাকা করা, সম্পদের সারচার্জমুক্ত সীমা বিদ্যমান ২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, বিভিন্ন ব্যাংক ও কোম্পানির কর্পোরেট করহার আড়াই থেকে ৫ শতাংশ হারে কমানো, স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনে বর্তমান অগ্রিম আয়কর অর্ধেকে নামিয়ে আনা, সিএসআর (কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) খাতে ব্যয়কে করমুক্ত ঘোষণা এবং বেসরকারি সফটওয়্যার পার্কের ক্ষেত্রে ২০ বছরের জন্য কর অবকাশের দাবি জানানো হয়।
অন্যদিকে ভ্যাট বিষয়ে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসয়ীদের প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি অব্যাহত রেখে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ও সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৬শ’ টাকা করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার নামে হয়রানি বন্ধ করতে প্রতি বছর একবার অডিট করা, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ করা, নিল ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়ার বিধান বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে শুল্ক বিষয়েও বেশকিছু প্রস্তাব দেয় ডিসিসিআই।
সভায় অন্যদের মধ্যে ডিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, শোয়েব চৌধুরী, পরিচালক খায়ের মোহাম্মদ খান, আব্দুস সালাম, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আতিক-ই-রাব্বানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।