ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বিভাগ (অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অত্যাধুনিক চিকিত্সাসেবায় একধাপ এগিয়ে গেল। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সিএমএইচেরও পোস্ট অ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টার, ক্যাজুয়ালেটি অ্যান্ড ইমারজেন্সি ইউনিটেরও উদ্বোধন করেছেন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী স্থাপনাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। সেই সঙ্গে সিএমএইচে চিকিত্সা সেবা বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। এছাড়া তিনি আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স এবং সেনা সদর কনফারেন্স অ্যান্ড অডিটরিয়াম কমপ্লেক্সেরও উদ্বোধন করেন। এই দুটি ভবন আধুনিক ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একবছর সময় নিয়ে এই ভবন নির্মাণ করেছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসে হাসপাতালে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, এরিয়া কমান্ডার (লজিস্টিক এরিয়া) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান ও হাসপাতালের কমান্ডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, ভারপ্রাপ্ত নৌ-বাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, সামরিক চিকিত্সা সার্ভিস মহা পরিদফতরের পরিচালকসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, এটি দেশের দ্বিতীয় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বিভাগ। এর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-২ তে ২০১৪ সালে এই বিভাগ চালু করা হয়। এখানে এখন পর্যন্ত ১৪টি বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা হয়েছে। চিকিত্সা শেষে সবাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। আরো ৬ জন অপেক্ষমাণ রয়েছেন। সিএমএইচের এই বিভাগ প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক শাহিনুল ইসলাম বলেন, সকলের জন্য এই সেবা উন্মুক্ত থাকবে।
জানা যায়, থেলাসেমিয়া, লিউকোমিয়া, এ-প্লাস্টিক এনিমিয়া, মাইলোমা, লিমপোমাসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকিতে দেশের কয়েক লাখ মানুষ। এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করতে হয়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিদেশে চিকিত্সা করতে খরচ হয় ২০-২৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে দেশে খরচ হয় ৫-৬ লাখ টাকা।
এটার জন্য দুই ধরনের চিকিত্সা সেবা রয়েছে। একটি অটোলোগাস অন্যটি এলোজেনিক। বাংলাদেশে অটোলোগাস পদ্ধতি প্রচলিত। এই পদ্ধতিতে রোগীর নিজের শরীর থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করে সংযোজন করা হয়। আর এলোজেনিক পদ্ধতিতে অন্যের শরীর থেকে স্টেম সেল নিয়ে সংযোজন করা হয়। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে চালু হবে।