বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আমানতে সুদের হার যতটা কমিয়েছে, ঋণের সুদের হার ততটা কমায়নি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।
তাই ঋণের সুদ হার কমানোর উদ্যোগ যেন নেওয়া হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।
গত ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভার কার্যপত্রে গভর্নরের এই নির্দেশানার উল্লেখ দেখা যায়।
কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদ হার যতটা কমেছে ঋণের সুদ হার ততটা কমেনি।
“বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ঋণের সুদ হার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।”
জানুয়ারি মাসে ব্যাংকিং খাতে গড় সুদ হার ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ থাকলেও কমপক্ষে ১৩টি ব্যাংকের গড় সুদ হার ১৪ শতাংশের উপরে ছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ।
কার্যপত্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে বেসিক, ন্যাশনাল, এক্সিম, প্রিমিয়ার, ব্র্যাক এবং নতুন আটটি ব্যাংকের (ফারমার্স, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, মধুমতি, মেঘনা, ইউনিয়ন, এনআরবি গ্লোবাল, এনআরবি কমার্শিয়াল ও মিডল্যান্ড ব্যাংক) গড় সুদ হার ছিল ১৪ শতাংশের বেশি।
এই ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি সব ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ঋণের সুদ হার কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঋণের সুদ হার কমিয়ে আনার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকার্স সভায়ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বলা হয়েছে।”
গত জানুয়ারি মাসে আমানত ও ঋণের ভারিত গড় সুদ হারের ব্যবধান অর্থাৎ স্প্রেড ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ছিল। এই সময়ে ঋণের ভারিত গড় সুদ হার ছিল ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর আমানতের গড় সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে এসে এই সুদ হার আরেকটু কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে আমানতের গড় সুদ হার ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ আর ঋণের গড় সুদ হার ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ।
মার্চ মাসে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুদ হারের যে তথ্য দিয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বড় ও মাঝারী শিল্পের মেয়াদি ঋণে অনেক ব্যাংক ১৫ শতাংশের বেশি হারে সুদ নিচ্ছে।
এর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংক ১৭ শতাংশ, ফার্মার্স ব্যাংক ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবাল ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১৬ শতাংশ সুদ নিচ্ছে।
এই হার প্রিমিয়ার ব্যাংকে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকে ১৬ শতাংশ, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এক্সিম, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনিয়ন, সাউথইস্ট, এসআইবিএলে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এপ্রিল মাসে ছোট শিল্পের জন্য মেয়াদি ঋণের সুদ হার ২৩ শতাংশ পর্যন্ত নেয় কোনো কোনো ব্যাংক। বেশ কয়েকটি ব্যাংকেরই সুদ হার ২০ শতাংশের উপরে।
একই অবস্থা চলতি মূলধনের বেলায়ও। বড় ও মাঝারী শিল্পের জন্য চলতি মূলধনের সুদ হার রয়েছে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। অধিকাংশ ব্যাংকেরই এ খাতে সুদ হার ১৫ শতাংশের উপরে।
আর ছোট শিল্পের চলতি মূলধন পেতে উদ্যোক্তাদের সুদ দিতে হচ্ছে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বোচ্চ এই সুদ নিচ্ছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকে সুদ হার ১৭ শতাংশের বেশি।