সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ‘নীরব প্রতিশোধ’ স্বরূপ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিয়ে ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটানোর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিনে রবিবার গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের ভোট অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বিরাট শক্তি। সঠিকভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। কেউ ভয় পাবেন না। মা-বোন, মুরব্বী, তরুণসহ সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার ভোটার সকাল-সকাল কেন্দ্রে যাবেন। লাইন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবেন। অনিয়ম ও কারচুপি দেখলে সবাই মিলে প্রতিবাদ করবেন, প্রতিরোধ গড়বেন। কারণ এই ভোট গুণ্ডামি, সন্ত্রাস ও অপমানের বিরুদ্ধে। মা-বোনের সম্ভ্রম রক্ষার ভোট এটি। ভোট শেষে বিকাল থেকে কেন্দ্রে পাহারা বসান। গণনা শেষে ফলাফল বুঝে নিয়ে আপনারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন। যাতে আপনাদের দেয়া রায় ওরা বদলে ফেলতে না পারে। ভোটের দিন এবং এর পরে কোনো উস্কানির ফাঁদে পা না দেয়ার এবং কোনো গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল মেনে নেয়ার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
ভোটগ্রহণ, গণনা, ফল ঘোষণা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন না।’ নির্বাচন কমিশনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ ও সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কথা বলে কমিশন এক ধূর্ত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী সেনা ছাউনিতেই থাকবে বলে কমিশন যে কথা বলেছে তা অর্থহীন ও পুরোটাই প্রতারণামূলক। ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস ও কারচুপির পরিকল্পনায় সহায়তা দিতেই নির্বাচন কমিশন এ পদক্ষেপ নিয়েছে।’ বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনীকে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে ভোটের দিন এবং আগে-পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোতায়েনের দাবি আবারও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আপনি বিনা ভোটে রাজকীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এই দম্ভ ত্যাগ করুন। মনে রাখবেন, সব দিন সমান যায় না। এ পর্যন্ত যা-ই করেছেন, তিনটি সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হতে দিন। এতে আপনার ক্ষমতা যাচ্ছে না। ক্ষমতায় বসতে এবং বসার পর আপনি অনেক অপরাধ-অপকর্ম-অপকৌশল করেছেন। এখন রাষ্ট্রক্ষমতা আপনার কাছে বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আপনি নামতে ভয় পাচ্ছেন। আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আপনার মতো প্রতিশোধপরায়ণ নই। আপনি নম্র, ভদ্র, সংযমী হোন। উগ্র স্বভাব ও জিঘাংসার মনোবৃত্তি বদলান। গণতন্ত্র ও সংলাপের পথে আসুন। আমরা আপনাকে সহি সালামতে নিরাপদে নামতে সাহায্য করব এবং একই সমতলে দাঁড়িয়ে নির্বাচন করব। মানুষ যাকে খুশি বেছে নেবে। আসুন, সেই পথটা অন্তত খুলে দেই।’
২০ দলের টানা অবরোধ-হরতালসহ আন্দোলনের মাঝে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণ ব্যাখা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই নির্বাচনকে আমরা সরকার, শাসক দল, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছি। এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। এমন একটি নির্বাচনেও যদি তারা যথাযথ আচরণ না করে, যদি সকল পক্ষের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি না করে, যদি নিরাপদ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উত্সবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারে এবং যদি সন্ত্রাস, ডাকাতি, কারচুপির মাধ্যমে তারা জনগণের রায়কে বদলে ফেলে, তাহলে সকলের কাছে আবারও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, এদের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবান্তর।’ এই প্রসঙ্গে পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দাবি করছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যখন যারা ক্ষমতায় তাদের অধীনে হতে পারে, এনিয়ে আমাদের দাবি নেই।’