নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড বন্ধে ‘যথাযথ’ পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশ দেন তিনি।
এসময় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারসহ আরও কয়েকটি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “জ্বালাও, পোড়াও, নানা ধরনের সন্ত্রাসী, জঙ্গি কাজ করে কয়েকটি দল যেভাবে মানুষের ক্ষতি করেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজেই এ ধরনের ঘটনা যাতে আর কেউ ঘটাতে না পারে এবং জঙ্গিবাদী কোনো কর্মকাণ্ড যেন বাংলাদেশে না হয়, অবশ্যই সে ব্যাপারে আপনারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সেই সঙ্গে হরতালও দেওয়া হচ্ছে।
অবরোধ-হরতালের নাশকতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এরই মধ্যে একজন লেখক-ব্লগার ও একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে হত্যা করা হয়েছে, যাতে জঙ্গিরা জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাঝখানে একটা দুঃসময় গেল আমাদের। প্রায় তিনমাস পর্যন্ত। সকল বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সকলেই যেভাবে ধৈর্য ধরে এ অবস্থা মোকাবিলা করেছেন, সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
স্থানীয় সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উন্নয়ন নিয়েও কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন সরকার প্রধান।
কালবৈশাখীর এই মৌসুমে ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আশা করব, আপনারা যার যার দায়িত্ব পালন করে মানুষের পাশে থাকবেন।”
দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনকে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে কথা বলেন।
পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্র বন্দর, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, নৌবাহিনী ঘাঁটি, কোস্টগার্ডের সদর দপ্তর স্থাপন ও বরিশাল বিভাগে সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন করাসহ বিভিণ্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমি বলতে পারি, পটুয়াখালী বাংলাদেশের সব থেকে উন্নত একটা এলাকা হতে যাচ্ছে। এটা আমরা করব। সে ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।”
এসময় পটুয়াখালী জেলা পরিষদের প্রশাসক খান মোশাররফ হোসেন বলেন, “আপনার কাছে আমাদের কোনও দাবি-দাওয়া নেই। দাবির আগেই আপনি যে উন্নয়ন করেছেন সেজন্য আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”
দক্ষিণবঙ্গে মানুষের ‘আগে অবহেলিত’ থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন আমরা চেষ্টা করছি এসব জায়গায় আরও বেশি উন্নয়ন করার জন্য। কাজেই এ উন্নয়নের কাজগুলো যাতে ভালোভাবে হয়, আপনারা সেটাই দেখবেন।”
নেত্রকোনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের চিত্র তুলে বলেন, “আমরা যথেষ্ট কাজ করেছি। হাওর-বাঁওড়ের মানুষ আগে যথেষ্ট কষ্টের মধ্যে থাকত। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে আমরা হাওর উন্নয়ন বোর্ড করে দিয়েছি। আমরা যে সমস্ত কর্মসূচি হাতে নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে এ এলাকার মানুষের কষ্ট থাকবে না।”
এসময় মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নেত্রকোনার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
নেত্রকোনার জেলা পরিষদের প্রশাসক মতিউর রহমান খান জেলার উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান। এর মধ্যে রয়েছে, শহরে যানজটমুক্ত করতে সংযোগ সড়ক স্থাপন, একটি হাসপাতাল নির্মাণ এবং দুর্গাপুরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা।
এরপর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় তিনি ‘বাংলার শস্যভাণ্ডার’ ও ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ হিসেবে বরিশালের পরিচিতির কথা তুলে ধরে বলেন, “আমরা চাই এগুলো আবার ফিরে আসুক।”
নদী ভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটা মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এই বিশাল বিশাল নদী, এত খাল, বিল, জলাশয়; একটা জায়গাও এক ইঞ্চি জমি কিংবা একটা জলাধার যেন পতিত পড়ে না থাকে, প্রতিটা জায়গায় যেন উৎপাদনমুখী কিছু হয়।”