প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতা ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করছে। জনগণের ওপর জুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে। তবে এগুলো আর সহ্য করা হবে না। কিছু দল ও মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বা কারো করুণা ভিক্ষা করে চলতে হবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সরকার ধৈর্যের সঙ্গে বিদ্যমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাচ্ছে। দেশকে জঙ্গি কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করতে এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ববোধ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মানুষ ধ্বংস চায় না, শান্তি চায়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে স্বাবলম্বী জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। তাই আসুন, সকলে মিলে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করি।
গতকাল বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও অনন্য অবদানের জন্য ৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় খেতাব স্বাধীনতা পদক-২০১৫ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তরা হলেন বৃহত্তর সিলেটে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকার জন্য কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী (মরণোত্তর), ১৯৭১ সালে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাতে শহীদ মামুন মাহমুদ (মরণোত্তর), ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মকালে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত সংগঠনকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া (মরণোত্তর), সাহিত্যে অবদানের জন্য বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রফেসর আনিসুজ্জামান, শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশিষ্ট অভিনেতা আবদুর রাজ্জাক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বিশিষ্ট কৃষি বিষয়ক গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ হোসেইন মণ্ডল এবং সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য প্রখ্যাত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত (মরণোত্তর)।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ না নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ রাজনৈতিকভাবে ভুল করলে তার খেসারত তো জনগণ দেবে না। কিন্তু এ জন্য কেন দেশের জনগণ নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হবে? তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতা এনেছি। আমরা চাই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে। আমরা জঙ্গিবাদী কর্মতত্পরতা চাই না, শান্তি চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা ভোগ করার জন্য নয়, জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের উন্নয়ন করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। এদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে। আমরা চাই বাংলাদেশ ও এর জনগণ বিশ্বমঞ্চে মর্যাদাশীল আসনে আসীন হবে।
পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বক্তব্যের সূত্র ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার শিক্ষক আনিসুজ্জামান স্যার ঠিকই বলেছেন। অতীতে এমন লোককে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে, যারা স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না, হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে অত্যাচার করত। তাদের স্বাধীনতা পদক দিয়ে জাতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন বিএনপি-জামায়াত দেশের চলমান অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে ৫ জানুয়ারি থেকে নাশকতা, ধ্বংস, জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির শিকার অগ্নিদগ্ধ মানুষদের পোড়া গন্ধে দেশের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেইন ভূইঞা পদকপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ সম্মাননা পাঠ করেন। প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী পোল্যান্ড
বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং, জ্বালানি, খনিজ, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পোল্যান্ড। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্কালে বাংলাদেশে নিযুক্ত পোল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত টমাস লুকাসজুক এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সফলতা, টেকসই উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।