ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পে অর্থায়নে অগ্রাধিকার দিয়ে বিশেষায়িত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড-বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত হবে। ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনায় থাকা ব্যাংকটিতে পরিচালক নিয়োগে জটিলতা দেখা দেয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩৫৬তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, সভায় পর্ষদের সদস্যরা বেসিক ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকের সংঘ-স্মারক (আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন) অনুযায়ী ব্যাংকটির মোট ঋণযোগ্য তহবিলের শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পে অর্থায়নের কথা থাকলেও তা আর মানতে বাধ্য নয় বেসিক ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নিয়োগ নিয়ে একে ‘বিশেষায়িত না বাণিজ্যিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে, তা সামনে চলে আসে। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ (সংশোধিত-২০১৩) অনুযায়ী বিশেষায়িত ব্যাংক ছাড়া অন্য যে কোন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তি নিতে হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি ছাড়াই বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়োগ দেয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে লিখিতভাবে আপত্তি তোলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রতিষ্ঠিত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। যেহেতু এটি একটি ব্যাংক কোম্পানি সেহেতু এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নেয়া আইনি বাধ্যবাধকতা। এরপর নিয়োগকৃত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনাপত্তিপত্র নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ১৯৮৯ সালের ২১শে জানুয়ারি বিসিসি ফাউন্ডেশনের ৭০ ভাগ ও সরকারের ৩০ ভাগ অংশীদারিত্বে আট কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে বেসিক ব্যাংক। ১৯৯১ সালের ৬ই জুন বিশ্বব্যাপী বিসিসি ফাউন্ডেশন অকার্যকর হলে পরের বছর ৪ঠা জুন বাংলাদেশ সরকার তাদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। ব্যাংকের মোট শাখা ৬৮টি, যার অর্ধেকই লোকসানি। বেসিক ব্যাংকের রাজধানীর তিনটি শাখায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়ম ধরার পর গত বছর ব্যাংকের কয়েক কর্মকর্তাকে বরখাস্তের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন। পরে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলাউদ্দিন এ মজিদকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে লোকসান কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকটি এরই মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে।