রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছে গেছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার অ্যাডিলেড ওভালে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
মাহমুদুল্লাহর শতকের পর রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৫ রানে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে গেলো বাংলাদেশ।
নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর শতক আর মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকে পৌনে তিনশ’ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। এরপর প্রাণপণ লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ এক জয় তুলে নেয় তারা।
ইয়ান বেল ও জস বাটলারের দুই অর্ধশতকে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখে ইংল্যান্ড। তবে রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তাসকিন আহমেদের মারাত্মক বোলিংয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অষ্টম ওভারেই মইন আলিকে হারায় ইংল্যান্ড। মিডঅনে বল পাঠিয়ে অসম্ভব একটি রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ফেরার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সৌম্য সরকারের দারুণ থ্রো ধরেই স্টাম্প ভেঙে দিয়ে মইনের বিদায় নিশ্চিত করেন মুশফিক।
দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন আলেক্স হেলস ও ইয়ান বেল। হেলসকে ফিরিয়ে ১২.৩ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন মাশরাফি। তার বলে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলা হেলস।
জোড়া আঘাতে বেল, মর্গ্যানকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে বড় একটা ধাক্কা দেন ম্যাচে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বল করা বোলার রুবেল। ২৭তম ওভারের প্রথম বলে অর্ধশতকে পৌঁছানো ইয়ান বেলকে (৬৩) মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন তিনি।
চতুর্থ বলে ওয়েন মর্গ্যানকে ফেরান রুবেল। তার বাউন্সারে হুক করে রানের খাতা খুলতে চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। কিন্তু ফাইন লেগে সাকিব ঠাণ্ডার মাথার চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন তিনি।
নতুন ব্যাটসম্যান আসার পর স্লিপে ইমরুল কায়েসকে নিয়ে আসেন মাশরাফি। সুফল পেতেও দেরি হয়নি। তাসকিনের হাতে ইমরুলের তালুবন্দি হয়ে ফিরে যান জেমস টেইলর।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারেই (৩৬) আঘাত হানেন মাশরাফি। জো রুটকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। পাওয়ার প্লেতে ৩ ওভার বল করে মাত্র ১০ রান দেন তিনি।
১২১/২ থেকে ১৬৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরান বাটলার ও ক্রিস ওকস। ৬১ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা বাটলারকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে বিপজ্জনক জুটি ভাঙেন তাসকিন। ৫২ বলে খেলা বাটলারের ৬৫ রানের ইনিংসটি গড়া ৬টি চার ও ১টি ছক্কায়।
অসম্ভব একটি রান নিতে চেয়েছিলেন ক্রিস জর্ডান। রান নেয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরে ফেরার চেষ্টা করেন তিনি। সাকিবের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে।
৪৯তম ওভারে ফিরে তিন বলের মধ্যে স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডসনকে ফিরিয়ে দেন রুবেল। ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেয়া এই পেসার বোল্ড করে ইংল্যান্ডের শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে।
রুবেলের বলে অ্যান্ডারসন বোল্ড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌছে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শুরুতেই ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দেন জেমস অ্যান্ডারসন।
দলে ফেরা ইমরুল থার্ড স্লিপে ক্রিস জর্ডানের হাতে ক্যাচ দেন। একবার জীবন পাওয়া তামিম ফিরে যান প্রথম স্লিপে জো রুটের তালুবন্দি হয়ে।
পাঁচ রানের মধ্যে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা জুটি উপহার দেন এই দুই জনে।
ইমরুল, তামিমের বিদায়ের পর চারটি স্লিপ নিয়ে বল করছিল ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষ প্রবল চাপ তৈরি করলেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দেন সৌম্য-মাহমুদুল্লাহ।
চার দিয়ে শুরু করা সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে ১৮.১ ওভার স্থায়ী জুটি। জর্ডানের বাউন্সার ঠিকভাবে খেলতে না পেরে জস বাটলারের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। পরের ওভারেই আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানের বিদায়ে অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ।
পাঁচ রানের মধ্যে সৌম্য-সাকিবের বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদুল্লাহ-মুশফিক। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করা মাহমুদল্লাহ দেখেশুনে খেললেও শুরু থেকেই রানের গতি বাড়িয়ে নেয়ার দিকে মনোযোগী ছিলেন মুশফিকুর।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি উপহার দেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে ১৪১ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। আগের রেকর্ডেও ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচেই ১৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।
ম্যাচ সেরা মাহমুদুল্লাহর রান আউটে ভাঙে ২৩.৫ ওভার স্থায়ী জুটি। প্রথম ওয়ানডে শতক করা মাহমুদুল্লাহ ফিরেন ১০৩ রান করে। তার আগের সেরা ছিল অপরাজিত ৮২ রান। মাহমুদুল্লাহর ১৩৮ বলের ইনিংসটি ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় গড়া।
ব্বিকাপে চার ম্যাচে তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেয়া মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসে ৮৯ রানের আরেকটি চমৎকার ইনিংস। তার ৭৭ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি গড়া ৮টি চার ও ১টি ছক্কায়।
এক সময়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ২৪০ রান। কিন্তু দ্রুত উইকেট হারানোয় শেষ দিকে বেশি রান তুলতে পারেনি তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৫/৭ (তামিম ২, ইমরুল ২, সৌম্য ৪০, মাহমুদুল্লাহ ১০৩, সাকিব ২, মুশফিক ৮৯, সাব্বির ১৪, মাশরাফি ৬*, সানি ৩*; অ্যান্ডারসন ২/৪৫, জর্ডান ২/৫৯, মইন ১/৪৪, ব্রড ১/৫২)
ইংল্যান্ড: ৪৮.৩ ওভারে ২৬০ (মইন ১৯, বেল ৬৩, হেলস ২৭, রুট ২৯, মর্গ্যান ০, টেইলর ১, বাটলার ৬৫, ওকস ৪২*, জর্ডান ০, ব্রড ৯, অ্যান্ডারসন ০; রুবেল ৪/৫৩, মাশরাফি ২/৪৮, তাসকিন ২/৫৯)
ম্যাচ সেরা: মাহমুদুল্লাহ।