নেটে বসেই পড়ছিলাম ফেনীর ফতেহপুর নামক এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন চার জন। এদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নাদিয়া সুলতানা। সাথে সাথেই মন খারাপ হয়ে গেল। তার পিতা নাজির আহাম্মদ অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার। আহত হয়েছেন তিনি এবং তার স্ত্রীও । নাদিয়ার একমাত্র বোনের অবস্থাও গুরুতর। নাজির সাহেবের আর কোনো ছেলে মেয়ে নাই। দুই কন্যার দ্বিতীয় কন্যাটিও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এই কন্যাটিকে হারালে হয়তো নি:সন্তান কাটাতে হবে আজীবন। পরম মমতায় পিতার চুলে তেল মেখে দেওয়ার কেউ থাকবে না। একটি দুঘর্টনায় একটি পরিবার বিলীন হবার মুখে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে চালকের অসাবধানতাই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। অদক্ষ চালকরাই এমন কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। আমাদের কোন একমন্ত্রী হয়তো কাল সকালে বলবেন, এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা। যারা গরু ছাগল যাচাই করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় তাদের কাছ থেকে এর বেশী আমরা আশা করি না। আমরা তাদের বোঝাতে চাই না একটি মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পেছনে কতটা শ্রম আর কষ্ট জড়িত। কতটা ত্যাগ আর তিতিক্ষা রয়েছে। আমরা সেই সব মন্ত্রীদের হিসেবে করে দেখাতে পারি না, একটি ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে তার পরিবারের এবং রাষ্ট্রের কতটা আর্থিক খরচাপাতি হয়। হয়তো বোঝালেও তারা তা বুঝবে না।
আমরা মিশুক মুনিরকে হারিয়েছি। তারেক মাসুদের মতো বিখ্যাত পরিচালককে আমরা রাস্তায় হারিয়েছি। গুণীজনেরা এসে এই গুণীজনের জন্য হাহাকার করেছেন। অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের বিদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক গুণীজন আরেক গুণীজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢালী আল মামুনের। আমাদের মন্ত্রীগণ দাঁড়িয়েছেন ড্রাইভারের পাশে। রতনে রতন চেনে। আমাদের এক মন্ত্রী সেখানে গিয়ে মন্তব্য করে এসেছেন, ‘আপনাদের ড্রাইভারের দোষ ছিল’। একজন মৃত্যু পথযাত্রীর আত্মীয়ের সহিত মন্ত্রী মহোদয়ের সৌজন্য প্রশংসার দাবীদার! একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল সবাই। ড্রাইভারদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সবাই চিৎকার করেছে। মন্ত্রী শাজাহান খান তখন আমাদের গরু-ছাগল তত্ত্ব শিখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে গরু ছাগল আলাদা করতে হয়। আমাদের ড্রাইভাররা গরু ছাগল বাঁচাতে গিয়ে মানুষ মেরে ফেলছে। কারণ তাদেরকে মানুষ চেনানো হয় নি। মানুষের প্রতি মমত্ব শেখানো হয়নি। মানুষ বাঁচানোর মতো করে দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা হয়নি। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনি তাদের গরুছাগল চিনিয়ে তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। এবার তাদের মানুষ চেনানোর ব্যবস্থা করুন। মানুষগুলোকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন। প্লিজ…।