প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পরাজিত শক্তির দোসররা বারবার দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে তা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়াতে হবে।’
বুধবার জাতীয় সংসদে ৭ মার্চের ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আমীর হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, জাসদের হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া আজ ওদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ও স্বাধীনতার মাস মার্চকে বেছে নেয়, তারা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানী সৈনিকরা তাদের ওপরের নির্দেশে কাজ করেছে। আর যারা এদেশের সন্তান হয়েও আমাদের মা-বোনকে পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দিয়েছে তারাই আসল যুদ্ধাপরাধী।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দিয়ে, জাতিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইন করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে সাহায্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো- ওনাদের পছন্দের পত্রিকা। সেই পত্রিকাতেই লেখা হয়েছে সালের নির্বাচনে ১৯৯১ আইএসআই’র কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এই রিপোর্টটি হয়েছে পাকিস্তানী আদালতে সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। পত্রিকায় পয়সা দিয়ে লেখা হয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ৪১ বছর পরও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কীভাবে বিজয়ী হতে হবে সেই প্রেরণা দেয়। বিশ্বের কোনো ভাষণ এত আবেদন রাখতে পারেনি। তার ৭ মার্চের ভাষণে আজও উদ্দীপ্ত হই।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস, বিজয়ের মাস। ফেব্রুয়ারি যেমন ভাষার মাস, তেমনি মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। এ মাসে যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যা বিশ্বাস করতেন তা-ই বলতেন। বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ রেখেছিলেন। অথচ বিরোধী দল বিএনপি পালন করলো না। তারা এ মার্চে ঢাকা চলো কর্মসূচি দিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়।’
বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যে নেত্রী পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়’র কাছ থেকে নির্বাচনের জন্য ৫ কোটি রুপি নেয়, বিদেশিদের কাছ থেকে অর্থ নেয়, তাদের কাছে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।’
১২ মার্চের বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় তারা এ কর্মসূচি দিয়েছে। যারা দেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একাত্তরে একবার দেশের মানুষ গর্জে উঠেছিলো, আরেকবার ঘরে
ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করুন।’
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্বের সেরা ভাষণ। একদিনের ভাষণ জাতিকে যোদ্ধায় পরিণত করেছে। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আবার সংগ্রাম করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করা সবচেয়ে বড় অপরাধ। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করলে ও সংবিধানে হাত দিলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন না তাদের রুখে দিতে এ সংগ্রামটি করতে চাই। তাদের পরাজিত করতে চাই। তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হবো। আসুন তাদের আরেকবার পরাজিত করি।’
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিয়ে কোনো বিতর্ক হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু বির্তকের উর্ধ্বে। কারণ তিনি জাতির পিতা। কোনো বাঙালি জাতির পিতাকে নিয়ে সমালোচনা করতে পারে না। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ করে তারা এদেশে থাকতে পারে না।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘হিংস্র যুদ্ধাপরাধীরা ছোবল মারবে এটা হতে দিতে পারি না। যতবার সাম্প্রদায়িকতা ছোবল দেবে ততবার ওদের পরাজিত করবো। এখন দরকার একমুঠো আগুন, একমুঠো ঐক্য।’
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘বাঙালি জাতিসত্ত্বা উত্থাপনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তারাই আজ দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জীবনের শেষ প্রান্তে আমি ঘোষণা করতে চাই- স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে গণতন্ত্রের দুষমনকে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও প্রতিরোধ করবো।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা, ভৌগোলিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলেছেন।’
আমীর হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেকে কখনো পাকিস্তানি হিসেবে পরিচিত করাননি। তিনি সব সময় নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য পশ্চিম পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কোন শাখা ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুধু এদেশের মানুষকে নয়, ভারত এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকেও উজ্জীবিত করেছিল। গুটি কয়েক মানুষ সেদিন যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল না। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মিলে নারী নির্যাতন করেছে। লুটতরাজ করেছিল। তারা আজ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র টিকবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। এদেশের মানুষ ৭১ এর মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করবে।’
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘আমি সে সময় সরকারি আমলা হিসেবে ওয়াশিংটনে কর্মরত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে আমরা কাজ করেছি।’