রাজধানীর গুলশান এলাকায় ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ও হেড অব সিটিজেন অ্যাফেয়ার্স খালাফ আল আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে গুলশানের ১২০ নম্বর রোডে পর্তুগাল দূতাবাসের দেয়াল ঘেঁষে একটি স্থানে ওই কর্মকর্তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায় পুলিশ। গুলশান থানার এসআই মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভোর সাড় পাঁচটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের এডিসি নিজামুল হক মোল্লা জানান, সোমবার দিবাগত দেড়টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সৌদি কর্মকর্তাকে ১২০ নম্বর রাস্তায় পাওয়া যায়। সেসময় তিনি জীবিত ছিলেন। পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার পর মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান।
নিজামুল হক মোল্লা আরো জানান, উদ্ধারের পর অজ্ঞাত হিসেবেই খালাফ আল আলীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
পর্তুগাল হাউজের নিরাপত্তাকর্মী জুলফিকার পুলিশকে জানান, তিনি ধস্তাধস্তি ও গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
গুলশান থানার ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৫০ গজ দূরে ১২০ নম্বর রোডের ২২/এ বাসার এ-৪ ফ্ল্যাটে থাকতেন খালাফ আল আলী।
ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী তাপস রেমা জানান, রাত সাড়ে ১১টায় খলিফ আল আলী বাসা থেকে হাঁটতে বের হন। রাতে তিনি নিয়মিতই হাঁটেন। তবে এই রাতে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। তাপস ভোর ছয়টা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বলে জানান।
তাপস জানান, তিনি ঘটনার সময় তার বাসার সামনে দিয়ে একটি জিপ গাড়ি দ্রুতগতিতে চলে যেতে দেখেছেন। ওই গাড়িতে দুই ব্যক্তি বসে ছিল বলেও জানান।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরে আযম সাংবাদিকদের জানান, নিহত এই কূটনীতিকের বুকের বাম দিকে একটি গুলি লেগেছে। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে এখনি কিছু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা।
পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সবদার আলী ঘটনাস্থল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।
ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্টদূত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুপুরে হাসপাতালে নিহত সহকর্মীর মরদেহ দেখতে যান।
ময়নাতদন্ত
সোমবার বিকেলে খালাফ আল আলীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখানে ময়নাতদন্ত করেন ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান ও প্রভাষক মেজবাউল ইসলাম।
এদিন সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে তারা জানান, নিহতের বুকের বাম পাশে একটি গুলি পাওয়া গেছে। এছাড়া শরীরের অন্য কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের বুধবার দেওয়া হতে পারে বলে তারা জানান।
এদিকে, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত সৌদি কর্মকর্তার লাশ ঢামেক হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। এখনো এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি ও কাউকে আটক করা যায়নি বলে তিনি জানান।
তবে এ ঘটনার পরপরই থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।