ভারতের তুলা রফতানি বন্ধে পোশাকশিল্পে অস্থিরতার আশঙ্কা

ভারতের তুলা রফতানি বন্ধে পোশাকশিল্পে অস্থিরতার আশঙ্কা

ভারতের তুলা রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের তুলা ও বস্ত্রকলগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি তৈরি পোশাকশিল্পে অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।

এছাড়াও রয়েছে বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়েরও আশঙ্কা। তুলা ও বস্ত্রকল সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য বাংলদেশসহ সকল দেশেই তুলা রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বে তুলা রফতানিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত।

দেশটির বিদেশি বাণিজ্য পরিদফতর সোমবার তুলা রফতানি নিষিদ্ধ রাখার কথা জানায়। একই সঙ্গে রফতানির জন্য ইতিমধ্যে যারা নিবন্ধন (এলসি) করেছে সেগুলোরও অনুমতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বাংলাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম তুলা আমদানিকারক দেশ। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম থাকায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তুলা ভারত, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা, উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, আমেরিকা ও মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে আমদানির সিংহভাগ আসে ভারত থেকে।

কিন্তু কোনো নোটিশ ছাড়াই ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সুতা ও বস্ত্রশিল্পে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১০ সালেও ভারত বাংলাদেশে তুলা রফতানি নিষিদ্ধ করলে এদেশের সুতা ও তাঁতশিল্প বেকায়দায় পড়ে।

বাংলাদেশের তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে বার্ষিক তুলার চাহিদা ৪২ থেকে ৪৫ লাখ বেল। উৎপাদন হয় মাত্র ১ লাখ বেলের সামান্য বেশি। এ বছর ৩৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২০ হাজার বেলের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫ হাজার বেল।

এ দেশের উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা সুতা ও বস্ত্রকলগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ভারত রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে এ দেশের অধিকাংশ সুতা ও বস্ত্রকলে তুলার সংকট সৃষ্টি হবে। ভারত সাময়িকভাবে তুলা রফতানি বন্ধ করে এদেশে একচেটিয়া সুতার বাজার করতে চায়। ফলে বাধ্য হয়েই ভারত থেকে চড়া দামে সুতা আমদানি করতে হবে।

পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়বেন। এতে দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ঋণ ও সুদ গুণতে গিয়ে শতাধিক স্পিনিং ও টেক্সটাইল মিল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় বেশি দামে তুলা কিনে সুতা উৎপাদন করে উভয় সংকটে পড়তে পারেন মিল মালিকরা।

সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এ পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ‘র’ ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ করা হয় দেশের সুতা ও বস্ত্রকল থেকে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্র জানায়, স্পেনিং, ডায়িং, ফিনিশিং মিলে প্রায় ১ হাজার ৩০০ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৭ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হয়। মোট আমদানির ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ আসে ভারত থেকে।

বিটিএমএ’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবেশি দেশ থেকে তুলা আমদানি করতে সময়, শ্রম ও অর্থ কম লাগতো। কিন্তু তারা হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমদানি ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। তিনি সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ভারত এদেশে সুতা ও বস্ত্র খাতের বাজার পুরোপুরি দখল করতে সাময়িক রফতানি বন্ধ করে তারা উৎপাদন খরচ কমিয়ে এদেশের বাজার দখল করতে চায়। এজন্য দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তিনি।

এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভারতের কটন অ্যাসোসিয়েশন’র প্রেসিডেন্ট ধীরেন এন. শেঠও সরকারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছেন বলেও জানান জাহাঙ্গীর আলামিন।

তবে উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মতিউর রহমান জানান, ‘আমরা পঞ্চবার্ষিকী (২০১১-১৬) পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এতে ১ লাখ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৭০ হাজার বেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে মোট চাহিদার ১৬-১৭ শতাংশ পূরণ হবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে সুতা ও বস্ত্রকলগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের অনেকটা যায় এ দেশের তৈরি পোশাক কারখানায়। ভারতের সিদ্ধান্তে পোশাক শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।

বিজিএমইএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে যেন ভারত ইতিপূর্বে দেওয়া তাদের ওয়াদা রাখে।

অর্থ বাণিজ্য