পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রয়োজনে ১২ মার্চ এমপি-মন্ত্রীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে থাকবে।’
সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, ১২ তারিখ যেন মন্ত্রী-এমপিরা রাস্তায় না বের হন। কিন্তু গণতন্ত্র বলে আমার পাশ দিয়ে বিরোধীদলের মিছিল যাবে আমি চুপ করে দেখবো। কিন্তু উনারা সেটা মানেন না। স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালাতে তারা স্বাধীনতার মাসে ১২ মার্চ বেছে নিয়েছেন।
তিনি (খালেদা) আবারও ১৮ ডিসেম্বরের মতো নৈরাজ্য-তাণ্ডব চালাতে চান। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা সরকার বিঘ্নিত হতে দেবে না। প্রয়োজনে ১২ মার্চ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা রাজপথে থাকবে।
খালেদা জিয়ার আসল উদ্দেশ্য গণতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলা, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না।’
বাংলাদেশে তিনটি পার্টি আছে। একটি সরকারি পার্টি, একটি বিরোধী পার্টি, আরেকটা হলো ভুল ধরা পার্টি। এই ভুল ধরা পার্টিরা রাত ১২টার পর টেলিভিশনে বসে শুধু ভুল ধরে। তাদের নিজেদের কোনো কাজ নেই, অন্যদের ভুল ধরাই তাদের কাজ। এরা কোনো কাজ করে না। অন্যের কাজের ভুল ধরে। এদের কেউ কেউ বা বন্ধুরা ২ বছর ক্ষমতায় ছিল। তাদের বন্ধুদের সময়ে জিডিপি বাড়েনি।’
তিনি বলেন,‘ আজ দেশে হাওয়া ভবন নেই, খোয়াব ভবন নেই- সর্বত্র ১০ ভাগ কমিশনের রেওয়াজ নেই। এ কারণেই হয়তো এসব ভুল ধরা পার্টিদের মন ভালো নেই, মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ৮৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সরকার যখন অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি দিকে নিয়ে যাচ্ছে অনেকে বলছে অর্থনৈতিক অবস্থা নাকি ভালো না। বিরোধীদলীয় নেত্রীও বলছেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। আমার মনে হয় উনি বলতে চেয়েছেন উনার (খালেদা) অবস্থা ভালো না। যদিও উনার অবস্থা ভালো। উনি হয়তো বলতে চেয়েছেন সরকারের থাকার সময় তার অবস্থা যেমন ছিলো তার চেয়ে খারাপ। এটা হতে পারে। কারণ এখন হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন নেই। উনার অবস্থা ভালো না। ভুল করে বলে ফেলেছেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। বরং কমেছে। আমাদের জোটের অনেকে বলেন আমরা দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে পারিনি। হ্যাঁ দাম বেড়েছে। দামি গাড়ির দাম বেড়েছে। কসমেটিকসের দাম বেড়েছে। বিলাসদ্রব্যের দাম বেড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আমেরিকাতে প্রতি লাখে ১১৯টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে ঘটেছে ১ দশমিক ৭টি। ধর্ষণ আমেরিকায় হয়েছে প্রতি লাখে ২৭ দশমিক ৫টি। বাংলাদেশে ১০ দশমিক ১৩টি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলের মতো বর্তমান মহাজোট সরকারের তিন বছরে বিরোধীদলীয় নেত্রীর জনসভায় বোমা পড়েনি, বরং সরকার নিরাপত্তা দিচ্ছে। কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীকে বোমা ও গুলিতে জীবন দিতে হয়নি।
বিকেল পাঁচটায় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আহাদ আলী সরকার, সরকারি দলের এইচএন আশিকুর রহমান, শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, বেগম মাহবুব আরা গিনি, বেগম ফরিদা রহমান, তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস প্রমুখ।
শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান মহাজোট সরকারের তিন বছরের সাফল্যে’র কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা নিরক্ষরমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত উচ্চশিক্ষিত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। সেই ভাবেই আমরা নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলছি।
আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের শিক্ষানীতির মুল লক্ষ্যই হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি এবং বাস্তবায়ন করছি। প্রচলিত শিক্ষায় আমরা নতুন প্রজন্মুকে গড়ে তুলতে পারব না, আধুনিক ও বিশ্বমানের শিক্ষায় জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, শিক্ষা নিয়ে কেউ বাণিজ্য করতে পারবে না। শিক্ষা কেন্দ্রকে ব্যবসা কেন্দ্র করতে দেব না। ভর্তি বাণিজ্য আমরা বন্ধ করেছি। বিএনপি-জামায়াত বলতো কোরআনের শিক্ষা তারা প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু তাদের আমলে বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের দেশে পরিণত হয়েছিল।
আমরা ১ হাজার মাদ্রাসা বিল্ডিং তৈরি, ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স এবং এরাবিক এফিলিয়েটেড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষাকে সমন্বয় ঘটিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
এইচএন আশিকুর রহমান বলেন, ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়া জাতির ইতিহাসই পাল্টে দিয়েছিল। আজ তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছেন। কিছু জ্ঞানপাপীরা কিছু লভ্যাংশের আশায় এ অংশে ভিড়েছেন।
শামসুর রহমান শরিফ বলেন, লাজ-লজ্জ্বার মাথা খেয়ে রাজাকার-আলবদরদের ঘাড়ে নিয়ে খালেদা জিয়া জাতির সামনে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। সংসদে না এসে রাস্তায় বোমাবাজি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করি, দেশে যুদ্ধাপরাধী না থাকলে একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষকে কে খুন করেছে? দু’লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বত কে কেড়ে নিয়েছে?