জাতিসংঘের বিবৃতিতে ঢাকার প্রতিবাদ

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) বিবৃতির জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। সম্প্রতি জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে ওএইচসিএইচআরের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, দেশে অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য সরকার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছে। প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সংঘাত নাশকতা করে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করা যাবে না। গত ১৬ জানুয়ারি জেনেভায় মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ওএইচসিএইচআরের কাছে বাংলাদেশের পাঠানো প্রতিবাদপত্রে গভীর হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিবৃতিতে প্রত্যেকটি প্রসঙ্গের জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের একটি সূত্র জানায়, ওএইচসিএইচআরের ওই বিবৃতি থেকে সবার ভুল ধারণা হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকৃত বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি প্রায় সব অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবির দায়ী। অন্য কোনো ইঙ্গিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে দায়ী করা হলে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে আড়াল ও উৎসাহিত করা হবে। ওএইচসিএইচআর তাদের বিবৃতিতে বলেছিল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন বিধিবহির্ভূতভাবে কোনো শীর্ষ বিরোধী নেতাকে আটক বা গ্রেফতার না করে তাও সরকারের নিশ্চিত করা উচিত। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে বলে বাংলাদেশের পাঠানো প্রতিবাদপত্রে জানানো হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে ওএইচসিএইচআর বলেছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ওই নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি সমর্থকরা অবরোধ ডাকার পরই অস্থিরতা শুরু হয়। সরকার সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও ওই দলের জ্যেষ্ঠ অন্য নেতাদের প্রতিবাদ কমর্সূচিতে অংশ নিতে বাধা দেয়। মতপ্রকাশ, চলাচল ও সমবেত হওয়ার অধিকারসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে অধিকার নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পুন:প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে ওএইচসিএইচআরের ওই বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, নাশকতার আশঙ্কায় ৫ জানুয়ারি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এখন আর তা নেই। ওএইচসিএইচআরের বিবৃতিতে সংঘাত-সহিংসতা আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা ভুল বার্তা দেবে বলে বাংলাদেশের প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, তাকে আটকে রাখা হয়নি। তিনি নিজের ইচ্ছায় তার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। তিনি চাইলে যেকোনো সময় তার বাসায় যেতে পারেন। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, সরকার গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচার প্রক্রিয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আদালত তাদের সাজাও দিয়েছেন। এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাৎ ও কলঙ্কিত করতে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীলদের নাশকতা সত্ত্বেও সরকার তা অব্যাহত রাখবে। উল্লেখ্য, ওএইচসিএইচআরের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বড় দুই রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতপার্থক্য দূর করার ব্যর্থতায় ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ২০১৪ সালে নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতির মতো এরই মধ্যে হতাহত হওয়া ও জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ওএইচসিএইচআরকে বলেছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সংঘাত-সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-, অবরোধ, হরতালকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবাদপত্রে আরো বলা হয়েছে, আইনসম্মতভাবে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আইন সমুন্নত রাখছে। ঢাকার সূত্রগুলো বলছে, গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া ওএইচসিএইচআর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ নয়। ওএইচসিএইচআর হলো জাতিসংঘ সচিবালয়ের একটি কাঠামো, যা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে থাকে। অন্যদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পর সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ আন্তরাষ্ট্রীয় ফোরাম। ওই ফোরাম সরাসরি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ গত বছর এ ফোরামের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। ওএইচসিএইচআরের বক্তব্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের বক্তব্য বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রচার করা হয়েছে। বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বলে কিছু নেই। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম ছিল ১৯৪৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৬ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের বদলে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের যাত্রা শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিয়ে প্রশ্ন: গত ২২ জানুয়ারি জাতিসংঘ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। সাংবাদিকরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘের রাজনীতি বিভাগ বা মহাসচিবের ভূমিকা জানতে চান। জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে ‘বিরক্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর আবার বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কিছু সদস্যের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্য বাছাইয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ডোজারিক বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত মানবাধিকার মান অনুসরণ করা অব্যাহত থাকবে। – See more at: http://www.sheershanews.com/2015/01/31/67169#sthash.HX2vZXFG.dpuf

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর