ফেনী লংমার্চে এরশাদের ১ জনসভা ৭ পথসভা

ফেনী লংমার্চে এরশাদের ১ জনসভা ৭ পথসভা

জাতীয় পার্টির (জাপা) ফেনী লংমার্চে থাকছে সাতটি পথসভা ও একটি জনসভা। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় তার বনানীস্থ কার্যালয়ে এ লংমার্চের সূচনা করবেন।

তারই নেতৃত্বে এ লংমার্চের প্রধান ও শেষ কর্মসূচি অর্থাৎ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে বিকেল ৩টায় তার উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, এরশাদ সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, নিমসার, পদুয়ার বাজার ও চৌদ্দগ্রামে পথসভায় বক্তব্য রাখবেন।

নির্ধারিত এসব পথসভার বাইরেও একাধিক পথসভা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায়। সাতটির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১২ টির মতো পথসভা হতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।

জনসভা শেষে রাতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে বিশ্রাম শেষে এরশাদ পরদিন মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি পথ ধরবেন।

এদিকে, ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে এ লংমার্চে সহস্রাধিক গাড়ি  অংশ নেবে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

জাপা মহাসচিব বাংলানিউজকে বলেন,  ‘আমাদের এ লংমার্চ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। ফেনী অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষার জন্য এ কর্মসূচি। ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া হলে ফেনীর মহুরী সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পড়বে। হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে।’

‘ফেনীবাসীর প্রাণের দাবির এ কর্মসূচি ফেনীবাসীই সফল করবে’ উল্লেখ করে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘ফেনীর জনসভা হবে ওই মাঠে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা। জনসভায় দুই লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হবে বলে আশা করি।’

অপরদিকে, এর আগে জাপার টিপাইমুখ বাঁধ ও তিস্তা লংমার্চের আগে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের যে আমেজ দেখা গিয়েছিল এবার তা দেখা যাচ্ছে না। লংমার্চের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পর থেকেই ফেনী অঞ্চলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গাছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া, ফেনী নদীর অবস্থান হচ্ছে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায়। কিন্তু জাপার লংমার্চ ছাগলনাইয়া উপজেলায় যাচ্ছে না। ফেনী সদরে জনসভার মধ্য দিয়ে লংমার্চের সূচি শেষ হচ্ছে। আর এ কারেণেই স্থানীয় নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে জাপা সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে তিস্তার পানি চুক্তির সঙ্গে ফেনী নদীর পানি চুক্তির বিষয়টি সামনে আনা হয়। আর এরপর থেকেই ফেনী জেলা সচেতন নাগরিক সমাজ নদী রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

নদী রক্ষার আন্দোলনে শুরু থেকেই নেতৃত্ব দেওয়া নদী তীরের বাসিন্দা জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভারতের পানির দাবি স¤পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ ফেনী কোনো আন্তর্জাতিক নদী নয়।’

তার দাবি, ‘খাড়গাছড়ি জেলার মাটিরাঙা ও পানছড়ি উপজেলার মধ্যবর্তী ভগবানটিলা নামের একটি পাহাড়েই এ নদীর উৎপত্তি।’

তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের ছড়া থেকে উৎপন্ন হওয়ার পরপরই নদীটি ভারতের ইজেরা গ্রামের কোল ঘেঁষে দুই দেশের সীমান্ত বরাবর বেশ কিছুদূর অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার গড়েরহাট ইউনিয়নের আমলীঘাট দিয়ে ফের বাংলাদেশে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। এরপর ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, সোনাগাজী উপজেলার উপর দিয়ে ১১৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ফেনী নদীতে শুষ্ক মৌসুমে এখনই প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। তই ভারতকে পানি দিলে ফেনী নদী মরে যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ওই নদীর উৎপত্তিস্থলে একাধিকবার গিয়েছি।’

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার বাসিন্দা পূর্ণ জ্যোতি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই নদী আমাদের, এই নদীর উপর ভারতের দাবি থাকতে পারে না।’

জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘ভারত চুক্তি ছাড়াই দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম মহুকুমার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ চালিত ২৪ টি লো লিফ্ট পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২ কিউসেক পানি তুলে নিচ্ছে। যে কারণে এখন বর্ষাকালেও ফেনী নদীতে আগের মত পানি পাওয়া যায় না।’

ফেনী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একাধিক কর্মকর্তা জ্যোতি চাকমার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেন, ‘পাউবো পারিচালিত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।’

তারা দাবি করেছেন, ‘কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ফেনীর ছাগলনাইয়া, সদর, পরশুরাম, ফুলগাজি, সোনাগাজি, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার প্রায় ২২ লাখ লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ও পরোক্ষভাবে প্রায় অর্ধকোটি লোক ক্ষতির সমুক্ষীন হবে।’

উল্লেখ্য, ফেনী নদীর পানি ব্যবহার করে শুধু মহুরী সেচ প্রকল্পের আওতায় ২৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। যা এই প্রকল্প চালুর আগে চাষের আওতায় ছিলো না। যা ১৯৮৭-৮৮ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে অনাবাদি পড়ে থাকত।

জাতীয় পার্টি ফেনী জেলা শাখার সভাপতি মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সাগর নিকটবর্তী হলেও তাদের গৃহস্থালী প্রয়োজনের পানি ছাড়াও খাওয়া-গোসল বিশেষ করে জমি চাষের ক্ষেত্রে মিঠা পানির একমাত্র উৎস ফেনী নদী।

ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি করা আর ফেনীকে মরুকরণ করা একই কথা।

রাজনীতি