বাতাস গাছের দাম ২৮ লাখ টাকা

বাতাস গাছের দাম ২৮ লাখ টাকা

TREEকিছুটা দূর থেকে সাধারণ গাছের মতোই মনে হবে। কিন্তু একটু কাছে গেলেই টের পাবেন ঘটনাটা আসলে কি। দূর থেকে দেখতে পাওয়া গাছটি আসলে গাছ নয়, বরংচ ওটা একটা পাওয়ার জেনারেটর। কিন্তু কি এমন গাছ সাদৃশ জেনারেটর যার দাম ২৮ লাখ টাকা! পাঠক, আপনি যদি বাজার থেকে একটা জেনারেটর কেনেন এবং সেই জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চান তাহলে আপনাকে কম করেও হলেও বেশ কয়েকটা হ্যাপা পার হতে হবে। প্রথমত প্রচুর তেল পুড়বে, দ্বিতীয়ত জেনারেটরের গগনবিদারী শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগার। তাহলে কোথায় মিলবে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি।

মানুষের এই যন্ত্রনা লাঘবের জন্যই ফরাসি কোম্পানি ‘নিউউইন্ড’ তৈরি করেছে বাতাস গাছ নামের একটি তিন মিটার উচু জেনারেটর। বিশেষত নগর জীবনের সংকীর্ণ স্থানের কথা চিন্তা করেই এই জেনারেটরটির নকশা করা হয়েছে। কোনো শব্দ ছাড়াই সারাদিন অনায়াসে চলবে এটা এবং প্রায় তিন দশমিক এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। তবে এই অল্প পরিমান বিদ্যুৎ দিয়ে তেমন কোনো ভারি কাজ করা না গেলেও একটি ছোটো পরিবারের নিত্যদিনকার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম এই জেনারেটর।

নগর জীবনে যেহেতু বেশ জোরে বাতাস সচরাচর বয় না, তাই অল্প বাতাসেও যেন এই বাতাস গাছের ক্ষুদ্র টারবাইনগুলো ঘুরতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাতাস গাছের প্রকৌশলী জুলিয়া রেভুজ এবিষয়ে জানান, ‘এই টারবাইনগুলো ঘুরতে খুব অল্প বাতাস দরকার। আর এই অল্প বাতাসেই তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। একটি ঘরকে উষ্ণ রাখতে কিংবা একটা আস্ত ইলেকট্রিক গাড়িকে চার্জ দিতে এই বিদ্যুৎই যথেষ্ট।’

আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে জেরোম মিখুদ লারভিরে নামের এক ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন। বাতাসের কারণে গাছের পাতায় সৃষ্ট আন্দোলন দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এই যন্ত্র তৈরিতে। কিন্তু বাতাস গাছ তৈরি করার সময় তিনি আগাগোড়াই খেয়াল রেখেছিলেন যেন এই গাছ তৈরি করতে গিয়ে প্রকৃতি বিরুদ্ধ কোনো উপাদানের ব্যবহার না হয়। তাই তিনি প্রকৃতিবান্ধব উপাদান দিয়েই তৈরি করেছেন এই বাতাস গাছ। আগামী মার্চ মাসের ১২ তারিখ প্যারিসের একটি জনপ্রিয় উদ্যানে পরীক্ষামূলক ভাবে এই বাতাস গাছ স্থাপন করা হবে। এখন পর্যন্ত এই পাঁচ টন ওজনের যন্ত্রটির দাম রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ডলার বা ২৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি আবিস্কৃত ‘বাতাস গাছ’ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বাজারজাতকরণ করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে ফ্রান্স এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে এই আবিস্কারের প্রতি। বিশেষ করে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাই এই যন্ত্রটিকে ব্যবহার করতে চাইছেন বাড়তি বিদ্যুৎ চাহিদা মোকাবেলার জন্য। শুরুর দিকে যন্ত্রটির দাম হাতের নাগালের বাইরে থাকলেও, প্রকৌশলীদের দাবি অদূর ভবিষ্যতেই এই যন্ত্রটির কারিগরি উন্নয়নের মাধ্যমে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়া হবে। তবে মজার বিষয় হলো, বাতাস গাছের পর প্রতিষ্ঠানটির পরবর্তী প্রকল্প হলো ‘পাওয়ার ফ্লাওয়ার’। যদিও এবিষয়ে এখনও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
বিজ্ঞান প্রযুক্তি