চলতি বছরের জুনের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য সরকারের কাছে প্রায় ৪৫ কোটি বরাদ্দ চেয়েছে তারা।
ইসি সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সীমানা চূড়ান্ত করা হলেই যাতে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা যায় সেই প্রস্তুতি চলছে।
রোববার ইসি সচিবালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদকে পাঠানো চিঠিতে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম চলতি অর্থবছরে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য এ টাকা সংস্থান রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, ‘সরকারের পক্ষ থেকে চলতি অর্থবছরের মধ্যে দুই ডিসিসির সীমানা নির্ধারণ জটিলতা নিরসন করলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।’
স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন চলতি জানুয়ারি মাস নাগাদ করতে গত বছরের শেষ ভাগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সিইসি বলছিলেন, এত স্বল্প সময়ে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে পারবেন না। এজন্য তাদেরকে সময় দিতে হবে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেন নির্বাচনের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে আগেই বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তখন ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
এ ব্যাপারে তখন ইসির পক্ষ থেকে জানান হয়েছিল, ঢাকার নির্বাচন যখন হবে, তখনই অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হবে।
আগামী ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। আইনানুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী মে মাসেই চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার কথা রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৩১ জানুয়ারি হালনাগাদ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মে-জুনকে নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বিবেচনা করা হচ্ছে। ডিসিসি দক্ষিণের সীমানা চূড়ান্ত হলে মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে তফসিল দেওয়া সম্ভব হবে।
তারা জানান, জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই এই নির্বাচন শেষ করার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমানা নির্ধারণের পর সর্বোচ্চ দু’মাসের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন শেষ করা সম্ভব।
তিনি আরো জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুত রাখতেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে হঠাৎ করে যদি বলে সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেছে- তখন যাতে কোনো সমস্যায় না পড়তে হয় সেকারণেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেহেতু চলতি অর্থবছরের বরাদ্দে ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। তাই এখন অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া হয়েছে।
জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হতে পারে- এই চিন্তা থেকেই অর্থ চাওয়া হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব।
এদিকে, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন জানান, সরকারের তরফে নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতির খবর তার কাছে নেই। এমন কোনো নির্দেশনাও তিনি পাননি।
তিনি জানান, দুই ডিসিসির সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের। এ কাজ এখনও তাদের পক্ষে চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আরও দু’মাস সময় লেগে যেতে পারে।
সর্বশেষ ২০০২ সালের এপ্রিলে অবিভক্ত ডিসিসির নির্বাচন হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে অবিভক্ত ডিসিসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর নানা জটিলতায় আর নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ১/১১ পরবর্তী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময় দুই বার নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি।
এরপর ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বরে ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণ ও ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তর নামে দুই ভাগ হয় ডিসিসি। দুই ভাগ করার পর অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে চলছে ডিসিসি।