আমেরিকান কইন্যা আফরোজ আক্তার মুন্নীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে আসেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই গাজী মিজান। নিজ বাড়ি থেকে তাকে গাড়িতে তুলে কয়েক কিলোমিটার এলাকা দূরে নিয়ে আসার পর বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে কৌশলে তাকে শ্যাওলা ব্রিজের কাছে নামিয়ে দেয়া হয়। গতকাল সকালে সিলেটের বিয়ানীবাজারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিয়ানীবাজারজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় আমেরিকান কইন্যা মুন্নী বিয়ানীবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। গতকাল বিকাল থেকে পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। আমেরিকান সিটিজেন আফরোজা আক্তার মুন্নী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে একজন কর্মকর্তা তার স্বামীর বাড়ী বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ার বাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর গ্রামে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা মুখ বাঁধা একজন যুবকসহ কয়েকজন যুবক ও একজন মহিলা ছিলেন। মহিলা নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে তাকে তাড়াতাড়ি পোশাক পরে তৈরি হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় মুন্নী তাকে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা তাকে ডিবি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর গাজী মিজান পরিচয় দিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে বলে জানান। এ সময় তারা জোরপূর্বক মুন্নী ও তার শাশুড়িকে তুলে নিতে চাইলে বাদ সাধেন পরিবারের লোকজন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ শুরু করেন মুন্নীর শ্বশুর আজির উদ্দিন। বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, শিক্ষামন্ত্রীর এপিএসসহ বিভিন্ন মহল বিষয়টি অবগত হন এবং ওপর মহলে কথা বলেন তারা। এরই একপর্যায়ে আজির উদ্দিন বিয়ানীবাজার থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওসি তার এলাকায় কোন কর্মকর্তা প্রবেশ করতে হলে তাকে জানানোর নিয়ম রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তাকে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তুু ওসির সঙ্গে যোগাযোগ না করেই তাকে নিয়ে সিলেটের পথে রওয়ানা দেন তারা। ওসি এ বিষয়ে অবগত হয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মিডিয়াকর্মীরাও বিষয়টির খবর পেয়ে আমেরিকান সিটিজেন কন্যার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এ নিয়ে বিয়ানীবাজারে হুলস্থূল পড়ে গেলে তড়িঘড়ি করে ডিবি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর গাজী মিজান আমেরিকান কন্যা আফরোজা আক্তার মুন্নী ও তার শশুর আজির উদ্দিন ও ননদ লাবণীকে নিয়ে একটি গাড়িযোগে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেয়ায় তাদের আর পাওয়া যায়নি।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে সিলেট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মুন্নীর শশুর আজির উদ্দিন জানান, সিলেটের পুলিশ সুপারের নির্দেশের পর ডিবি কর্মকর্তা তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করেন। তারা গাজী মিজানকে বলেন, তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য। এরই একপর্যায়ে ডিবি কর্মকর্তারা বিয়ানীবাজার-সিলেট সড়কের শেওলা ব্রিজের উত্তর পারের নির্জন স্থানে তাদের ফেলে দিয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে চলে যান। আফরোজা আক্তার মুন্নী জানান, ডিবি অফিসার আমাদের ফেলে যাওয়ার পর আমাদের পেছন থেকে দুটি গাড়ি আমাদের ধাওয়া করে। আমরা প্রাণ রক্ষার্থে গোলাপগঞ্জ থানায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে গোলাপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম ফজলুল হক শিবলীকে ঘটনা খুলে বলি। পরে ওসি আমাদের বিশেষ ব্যবস্থায় গোলাপগঞ্জ থেকে বিয়ানীবাজার থানায় পাঠিয়ে দেন। আফরোজা আক্তার মুন্নী বলেন, গোলাপগঞ্জ থানার ওসির সহযোগিতায় আমরা নিশ্চিত অপহরণ থেকে মুক্তি পেয়েছি। এদিকে গতকাল রোববার এ খবর শুনে মিডিয়া কর্মীরা চারদিকে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। এদিকে, বেলা ২টায় বিয়ানীবাজার থানায় এসে হাজির হন আমেরিকান সিটিজেন আফরোজা আক্তার মুন্নী, শ্বশুর আজির উদ্দিন ও ননদ লাবণী। বিয়ানীবাজার থানার ওসির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিডিয়ার সামনে হাজির হন মুন্নী। তিনি নিজেকে সাড়ে ২৬ বছর বয়সী উল্লেখ করে বলেন, ২০০৮ইং সনে ভালবেসে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর গ্রামের আজির উদ্দিনের পুত্র সুহেল আহমদের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি সংসার করেছেন। এরপর তিনি পিতা-মাতার সঙ্গে চলে যান আমেরিকা। এরই মধ্যে তার পিতা জকিগঞ্জের এক পাত্রের সঙ্গে ২০ লাখ টাকা রফাদফার মাধ্যমে তার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেন। বিষয়টি তিনি অবগত হয়ে বিয়ের আগের দিন তার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং স্বামীকে দেশে আসার পরামর্শ দেন। স্বামীও সঙ্গে সঙ্গে দেশে এসে পৌঁছেন। পিতার এসব ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বিয়ানীবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন জানিয়ে মুন্নী বলেন, আমার স্বামী ও তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে যখন আমি সুখে শান্তিতে বসবাস করছি, তখন আমার পিতা আমার সুখ সহ্য করতে না পেরে আমাকে ও আমার স্বামীর পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর গাজী মিজানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আদালতের একটি আদেশ বলে তাদের আদালতে হাজির করার জন্য পুলিশ নিয়ে যাই। পরবর্তীকালে ওপর মহলের নির্দেশে তাদের রেখে আসি। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ওসি জুবের আহমদ বলেন, আমার এলাকায় কোন অফিসার প্রবেশ করতে হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবগত হয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার নির্দেশে ডিবি পুলিশ শেওলা ব্রিজের কাছে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আত্মরক্ষার্থে তারা গোলাপগঞ্জ থানায় আশ্রয় নিয়ে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদেরকে বিয়ানীবাজার নিয়ে আসা হয় এবং তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। ওসি জানান, এ বিষয়ে আফরোজা আক্তার মুন্নী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।