দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষ হয়েছে। রোববার বেলা ১১টা ২২ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। বেলা ১১টা ৫৪ মিনিটে মোনাজাত শেষ হয়। মোনাজাতে দেশ-জাতি ও বিশ্বের সব মানুষের জন্য সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করা হয়।
৩২ মিনিটের মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লির হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ। বাদ ফজর থেকেই তিনি বয়ান করেন। তার বয়ানের বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম।
লাখো মুসল্লির ক্ষণে ক্ষণে ‘আমিন আমিন’, ‘আলাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর বাতাস। টঙ্গীর ‘কহর দরিয়া’ খ্যাত তুরাগ নদের তীর ও আশপাশের বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি, হেদায়েত, হেফাজত ও দীনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হল বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্ব।
মোনাজাত চলাকালে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। তবে মাঝে মাঝে শোনা যায় ‘আমিন আমিন’ধ্বনি। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করে নিজ নিজ গুনাহ মাফ কামনা করে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মোনাজাত উর্দু ভাষায় ‘রাব্বানা জলামনা আন ফুসানা’দিয়ে শুরু হয় এবং হে আল্লাহ এ দোয়াকো কবুল ফরমা দে, রাব্বানা আতিনা….আল হামদুলিল্লাহে রাব্বিল আল-আমিন, আমিন’ বলে শেষ করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে বিশ্বের ৯০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিদেশি অতিথিসহ দেশ-বিদেশের প্রায় ৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ শরিক হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মোনাজাতের সময় মুসল্লিরা দুহাত তুলে আমিন আমিন করে অশ্রুসিক্ত চোখে মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করেন। আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় রাহমানুর রাহিম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব।
মোনাজাতে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লির হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ আরবি ও উর্দু ভাষায় দোয়া পরিচালনা করেন। দোয়ায় বলেন, ‘ইয়া আল্লাহ পুরি ইনসানিয়াত কো হেফাজত ফরমা, ইয়া আল্লাহ পুরি উম্মত পর রহম ফরমা, ইয়া আল্লাহ তু হামপর রাজি হো যা, ইয়া আল্লাহ হামারে দিলকো ইসলাম পর কবুল ফরমা, ইয়া আল্লাহ ছব লোক কো হেদায়েত নসিব ফরমা, পেরেশানি কো দূর ফরমা’ ইত্যাদি। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মাওলানা সাদ তার প্রদত্ত বয়ানে হেদায়েতি (দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি) সম্পর্কে সবিস্তার আলোচনা করেন।
মূল ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই আশপাশের এলাকা ও মহাসড়কে অবস্থান নেন। আশপাশের এলাকার ভবনগুলোর ছাদেও মানুষের ভিড় দেখা যায়। সেখান থেকেই মোনাজাতে শরিক হন অনেকে। এ সময় আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
মোনাজাত চলাকালে দক্ষিণে বিমানবন্দর, উত্তরে গাজীপুর বোডবাজার পূর্বে পূবাইলের মাঝুখান এবং পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার ভোররাত থেকে যানবাহনশূন্য সড়ক-মহাসড়ক ও নদীপথে টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার শুরু হয়। চারদিকে যত দূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। সকাল ৮টার মধ্যে গোটা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী, উত্তরা ও আশপাশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস কারখানা ও সকল শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল।
আখেরি মোনাজাতের বিস্তৃতি
তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ের ইজতেমা কেবল তুরাগপাড় কিংবা টঙ্গীতে সীমাবদ্ধ ছিল না। উত্তরে চেরাগ আলী, দক্ষিণে খিলক্ষেত, পূর্বে টঙ্গী রেলস্টেশন, পশ্চিমে এরশাদনগর ও দক্ষিণে তা ছাড়িয়ে যায় কামারপাড়া। সাভার বাইপাইল, জয়দেবপুরের চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে দাঁড়িয়েও দেখা যায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে মোনাজাতে অংশ নিতে। রাস্তাঘাট, দোকানপাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাসাবাড়ির ছাদ, নৌকা-লঞ্চ ও বাস-ট্রাকের ছাদে যে যেখানে যে অবস্থায় ছিলেন, সেখান থেকে দুই হাত তুলে শরিক হন আখেরি মোনাজাতে। তবে অনেকের মতে, এ বছর প্রথম পর্বে মুসল্লির সংখ্যা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম হয়েছে।