গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ-জামাই দেখা মাছ বেচা!

গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ-জামাই দেখা মাছ বেচা!

fishপ্রবাদ আছে, রথ দেখা কলা বেচা। কিন্তু গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইলে মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিনটাতে এই প্রবাদটা একটু বদলে গিয়ে হয়ে যায়, ‘জামাই দেখা, মাছ বেচা’! কারণ এদিন গ্রামটিতে যে বিশাল মাছের মেলা বসে সেখানে মাছ কিনতে আসেন এই এলাকা ও আশেপাশে বিয়ে করা পুরুষরা। কোন্ জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন তা দেখার জন্য কৌতূহল থাকে সবার। মাছ কেনার জন্য জামাইদের মধ্যে চলে তাই নীরব প্রতিযোগিতা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাছ বিক্রেতারা আকাশছোঁয়া দর হাঁকেন।

গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় এই ব্যতিক্রমী ও ঐতিহ্যবাহী মেলা। মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিনটিকে ঘিরেই এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উত্সব। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এলাকার জামাইদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়, আবার বড় বড় মাছ দেখার ও কেনার সুযোগও মিলে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটা বাঘাড় মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৮০ হাজার টাকা। চুপাইর এলাকার জামাই নুরুল ইসলাম মাছটির দাম ৫৫ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়লেন না। ক্রেতার চেয়ে বেশি উত্সুক জনতা ভীড় জমিয়েছে মাছটি দেখার জন্য। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহত্ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এবারের মেলায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি সব নাম ও আকারের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও। বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উত্সবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ৪০ বছর যাবত্ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উত্সবে রূপ নিয়েছে। এলাকার জামাইরা বলেন, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইয়ের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। তাই স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহ খানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন মেলার প্রস্তুতি হিসাবে। সেই অনুযায়ী গগনচুম্বি দামও হাঁকানো হয়।

কথা হয় চুপাইর গ্রামের জামাই নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2015/01/16/11774.html

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ শীর্ষ খবর