আক্রান্ত হলে অস্ত্র ব্যবহার করা হবে: বিজিবির ডিজি

আক্রান্ত হলে অস্ত্র ব্যবহার করা হবে: বিজিবির ডিজি

1421385681বিজিবি মানুষ হত্যা করতে চায় না। সে ধরনের নির্দেশও বিজিবির ওপর নেই। তবে মানুষ হত্যা করতে দেখলে এবং নিজে আক্রান্ত হলে জীবন বাঁচানোর জন যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করবে তারা। আক্রান্ত হলে সে নিজের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এটা তার অধিকার। মনে রাখতে হবে বিজিবির হাতে থাকা সব অস্ত্রই প্রাণঘাতি। গতকাল বিজিবি সদর দফতরে বিজিবি’র ত্রৈমাসিক কার্যক্রম সম্পর্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবি অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খায়রুল বাশারসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, একজন ব্যক্তি যদি পেট্রোল বোমা ফাটায় তাহলে ৫ জন লোক নিহত হতে পারে। এই দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমাবহনকারীকে ‘ক্যাজুয়ালটি’ করা তার দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো বোমাবাজকে গুলি করতে বিজিবি কুণ্ঠিত হবে না।
মহাপরিচালক বলেন, ঢাকার বাইরে ৩৫টি জেলা থেকে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৭টি জেলায় বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। প্রতিদিনি ৮০-৮৫ প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে। বাকি জেলাগুলোর জন্য আলো ৭০-৭৫ প্লাটুন বিজিবি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলেই তারা যেতে পারে। সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবি সদস্যরা কতদিন এভাবে দায়িত্ব পালন করবেন জানতে চাইলে মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালের কথা তো আপনাদের মনে আছে, সুতরাং আমরা মাসের পর মাস, যতদিন প্রয়োজন, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করে যাব। তিনি বলেন, পরিস্থিতির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। আমি প্রতিদিন প্রতিবেদন পাচ্ছি। দু’-একটা রুটে সমস্যা আছে। তবে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে বিজিবির গাড়ির পাশে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ৩-৪টি ঘটনা ঘটলেও তাতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের কারণে রাস্তায় যান চলাচলেও নিরাপত্তা দিচ্ছে বিজিবি। বুধবার রাতেও বিজিবির পাহারায় ৩৫ হাজার গাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত রক্ষা আমাদের প্রাইম কাজ। কিন্তু জনগণের জানমাল রক্ষা করা, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেয়া— এসব আমাদের সেকেন্ডারি কাজ। সুতরাং এ কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়াও বিজিবি’র গত বছরের কর্মকাণ্ডের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে কোনো সমস্যা হলে তা তাত্ক্ষণিক যোগাযোগে সমাধান করা যায়। গত জুন ও ডিসেম্বরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর তাত্ক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। আগে মিয়ানমার কোনো ইয়াবা ব্যবসায়িকে ধরতো না। আলোচনার পর তারা একবার দুই লাখ, আরেকবার চার লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। তবে মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর চোরাকারবারীদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে যায় বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক জানান, বিজিবির জন্য ‘এয়ার উইং’ হচ্ছে। এজন্য চারটি হেলিকপ্টার কেনা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিও পাওয়া গেছে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের যেসব এলাকায় পায়ে হেঁটে টহল দেয়া সম্ভব হয় না, সেসব এলাকায় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেয়া হবে। ভারত সীমান্তের ৩৪১ কিলোমিটার ও মিয়ানমার সীমান্তের ১৯৮ কিলোমিটার পায়ে না হাঁটার মত জায়গা রয়েছে। বিজিবি প্রধানের এই সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির পদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালকের বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় ‘বিজিবির মহাপরিচালক রাজনৈতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গুলি চালাবার যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাতে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন নির্দেশ সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত ও আইনপরিপন্থী।’
এর আগে গতকাল সকালে বিজিবির মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ বলেন, ‘বিজিবি মানুষ হত্যা করতে চায় না। তবে আক্রান্ত হলে সে নিজের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে, এটা তার অধিকার। মনে রাখতে হবে, বিজিবির হাতে থাকা সব অস্ত্রই প্রাণঘাতী।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত স্থায়ী কমিটির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছে। তারা চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান তো দূরের কথা, এ সংকটকে স্বীকারই করছে না। রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ভূত চলমান অচলাবস্থাকে ক্ষমতাসীনেরা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে প্রচার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে সবকিছু দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কিছু উত্সাহী কর্মকর্তা বেআইনি নির্দেশ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য প্রকাশ্যে দিতে শুরু করেছেন। এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহকে আইনসম্মত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়। স্থায়ী কমিটির দাবি, অবরোধকালে নাশকতার ঘটনা সরকারই ‘সুপরিকল্পিতভাবে’ ঘটাচ্ছে। এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এসবের দায় পুরোপুরিভাবে সরকারের ওপরই বর্তাবে।
অন্যান্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর