সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, “জয়বাংলা স্লোগান দিলেই সব হয়ে যায় না। তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হবে। শুধু স্লোগান দিয়ে দায় সারলে হবে না। জয় বাংলা কোনো দলীয় স্লোগান নয়, এ স্লোগান সার্বজনীন। রাজনীতি সংস্কৃতিরই অংশ। আমরা সাংস্কৃতিক আন্দোলন করছি একটি সুন্দর দেশ গড়ার জন্য।”
বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বাংলাদেশ লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যে বলেন, “এটি গর্বের সম্পদ। এটি আমাদের ধারণ করতে হবে। রক্ষা করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের যে লড়াই শুরু হয়েছে সে লড়াইয়ে আমাদেরকে জয়ী হতেই হবে।”
মন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে শিশুদের উপর জিপিএ-৫ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একটি ক্লাসে সবাই প্রথম হয় না। তাই বলে যারা জিপিএ-৫ না পায় তারা কী মেধাহীন? তাদের কাঁধে বইয়ের বোঝা ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। শিশুরা এখন ফুল, পাখি, নদী, আকাশের কাছে যেতে পারছে না। শুধুমাত্র পাঠপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।”
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এনডিসি। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুরর রহমান কালাম প্রমুখ।
পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে অতিথিরা। মন্ত্রী পরে মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এর আগে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এবারের মেলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল আবেদীনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নিবেদন করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৪৪ জন কারুশিল্পী মেলায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ২২টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মা-রার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের নক্শি পাখা, রংপুরের শত রঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারু শিল্প, নক্শিকাঁথা, নক্শি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারু শিল্প, নাটোরের শোলার মুখোস শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্প ইত্যাদি এ মেলায় স্থান পাচ্ছে।
মেলায় কর্মরত কারু শিল্পীর কারু পণ্য উৎপাদন প্রদর্শনীর ২২টি স্টলসহ সর্বমোট ১৭২টি স্টল থাকবে। এদের মধ্যে হস্তশিল্প-৪৯টি, পোশাক-৪২ টি, স্টেশনারি ও কসমেটিক্স-৩৫টি, খাবার ও চটপটির স্টল-১০টি, মিষ্টির স্টল-১৪টি।
এছাড়াও লোক কারু শিল্প মেলা ও লোকজউৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান,লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে।
মেলায় শিল্পী মমতাজ বেগম, বারী সিদ্দিকী, ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, দীপ্তি রাজবংশী, ফকির আলমগীর, কিরণ চন্দ্র রায়, কাঙ্গালিনী সুফিয়া, রুবি সরকার, ছোট খালেক দেওয়ান, আইনাল হক বাউলসহ অনেক শিল্পী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোক সংগীত পরিবেশন করবেন।
মেলা সকাল ৯টা থেকে প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলা চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত । এবারের মেলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল আবেদীনের জন্মশতবার্ষিকীকে নিবেদন করা হয়েছে।