শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এবার সম্মানিত করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ভূয়সী প্রশংসাও করলেন তিনি। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, তিনি অতি দরিদ্রদের মাঝে জীবনের আশা, সুযোগ ও মর্যাদা জাগ্রত করেছেন। ১০২তম ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ড. ইউনূসকে স্বর্ণপদক উপহার দিলেন। গত ৩রা জানুয়ারি মুম্বইয়ে ওই অনুষ্ঠান হয়। ড. ইউনূস ছাড়াও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ৪ ব্যক্তিত্ব ও ভারতীয় ৫ বিজ্ঞানীকেও এ পদক দেয়া হয়। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞানী, ভারতীয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন ভাইস চ্যান্সেলর, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি। সব মিলে উপস্থিতি ছিল ২০ হাজারেরও বেশি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে নরেন্দ্র মোদি নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের সম্মান জানিয়ে বলেন, আমরা এখানে নোবেল বিজয়ীদের সঙ্গে একত্রিত হতে পেরেছি। তারা বিজ্ঞানে যে কাজ করেছেন তা ভয়াবহ রোগের বিরুদ্ধে নতুন করে আশা জাগিয়ে তুলেছেন। আমাদের মাঝে এমন একজনও আছেন যার সামাজিক বিজ্ঞান অতি দরিদ্রদের মাঝে জীবনের আশা, সুযোগ ও মর্যাদা দিয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন মোদি। এ সময় তিনি বলেন, ভারতের জাতীয় অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন। এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিস, ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এসবি নিমসে ও অন্য অনেকে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নিয়ে চা-চক্রে বসেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তির সর্বশেষ উন্নয়নগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এক ঘণ্টার ওপরে। এ চা-চক্রে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. ইউনূস। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এতে উপস্থিত ছিলেন ২০০১ সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পল নারস, ২০০২ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কুর্ট উথরিচ, ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আদা ই য়োনাথ, ২০১৩ সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী র্যান্ডি শেকম্যান। ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস হলো ভারতে বিজ্ঞান বিষয়ে সবচেয়ে বড় সম্মেলন। ১৯১৪ সাল থেকে প্রতি বছর এ সম্মেলন হচ্ছে। ধীরে ধীরে এটি আন্তর্জাতিক রূপ গ্রহণ করেছে। প্রতি বছর এতে যোগ দেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০ হাজারের বেশি মানুষ। যথারীতি এই কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এ বছর ৩রা জানুয়ারি থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত এ সম্মেলন হচ্ছে মুম্বই ইউনিভার্সিটিতে। এ অনুষ্ঠানের এক বছর আগে প্রফেসর ড. ইউনূসকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকা এসেছিলেন ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর, লক্ষ্ণৌ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর এসবি নিমসে। তখন তিনি প্রফেসর ইউনূসকে এ সম্মেলনে উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা কি তা নিয়ে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০ হাজার আমন্ত্রিত অতিথির সামনে মূল প্যান্ডেলে বক্তব্য রাখেন। এর আগে তাকে উপস্থিতদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানী, ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর অনীল কাকোদকার। তিনি এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। এতে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক শুরুর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ড. ইউনূস। এতে তিনি তুলে ধরেন কিভাবে এই ব্যাংক সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক বাণিজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কিভাবে অতি দরিদ্রদের সামাজিক সমস্যা সমাধান হয়েছে। কিভাবে তা বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে কাজ করছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কিভাবে আগামী ২০ বছরের মধ্যে নাটকীয়ভাবে বিশ্বকে বদলে দেবে সে বিষয়েও কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি গত ২রা জানুয়ারি মুম্বই পৌঁছেন। গতকাল তার দেশে ফেরার কথা।