আর মাত্র দুই দিন পরেই ফেনী নদী অভিমূখে জাপার লংমার্চ। বিগত দুটি লংমার্চের আগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেলেও এবার ভাটার টান দেখা যাচ্ছে।
লংমার্চকে কেন্দ্র করে ফেনী অঞ্চলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে পার্টি সূত্র জানিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নেতাদের একপক্ষ চাইছেন, নদী এলাকায় লংমার্চ করতে আর অন্যপক্ষ চাইছেন, তাদের নির্বাচনী এলাকায় শো-ডাউন করতে। লংমার্চের পথসভা ও জনসভার স্থান নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ফেনী এলাকার এ বিভক্তির ছোঁয়া এসে ঠেকেছে কেন্দ্রে।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, ফেনী নদীর অবস্থান হচ্ছে জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায়। কিন্তু জাপার লংমার্চ ছাগলনাইয়া উপজেলায় না গিয়ে নদী তীরবর্তী থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ফেনী সদরে জনসভার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে জাপার এ কর্মসূচিকে হঠকারী উল্লেখ করে অনেক নেতা মন্তব্য করেছেন, এতে মূল লক্ষ্য ব্যাহত হবে। ফেনী নদীর পানি রক্ষার জন্য এ আন্দোলন নদী পাড়ের লোকজনকে নাড়া দেবে না। এই লংমার্চকে কেউ কেউ বনভোজনের সঙ্গে তুলনা করছেন। আবার কারো কারো মতে, ফেনী সদরেই যদি জনসভা হবে তাহলে লংমার্চ নামে রূপ দেওয়ার প্রয়োজন কি? জনসভা ঘোষণা করলেই তো হতো।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, ফেনী এলাকায় দলের তিন শীর্ষ নেতার অবস্থান রয়েছে। তারা হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার ও যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন।
এই তিন নেতার মধ্যে রশি টানাটানির মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ হাজী আলাউদ্দিনের পক্ষ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
হাজী আলাউদ্দিন চাইছেন, ফেনী ২ (সদর) নির্বাচনী এলাকার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভা করে তার নির্বাচনী শোডাউন করতে।
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী ছাগলনাইয়া উপজেলায় নদী পাড়ে জনসভা অথবা পথসভা করার পক্ষে। কারণ, তিনি নদী এলাকার লোকজনকে নিয়ে শুরু থেকেই পানি রক্ষার আন্দোলন করে আসছেন।
জাপার একাধিক নেতা দাবি করেছেন, গোলাম মাওলা চৌধুরীর প্রচেষ্টার কারণেই এই লংমার্চ হতে যাচ্ছে। গোলাম মাওলার বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, গোলাম মাওলা চৌধুরী ফেনী-১ ( ফুলগাজি, পশুরাম, ছাগলনাইয়া) আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তাই তিনি সেখানে তার নির্বাচনী শোডাউন করতে চান।
ছাগলনাইয়া এলাকার নেতাদের দাবি, ‘ফেনী সদরে জনসভা করতে আমাদের আপত্তি নেই। যাওয়ার পথে অতিরিক্ত ২৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে ছাগলনাইয়ায় পথসভা করতে তো বাঁধা নেই।’
এতে অনেকের সায় থাকলেও বাঁধ সেধেছেন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহম্মদ। লংমার্চের স্থান নির্ধারণের সময় অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই পথসভার বিষয়টি তিনি কর্মসূচি থেকে বাদ দেন।
একটি সূত্র দাবি করেছে, ছাগলনাইয়ায় এরশাদকে না নেওয়ার জন্য হাজী আলাউদ্দিনের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন জাফর আহম্মদ। একই সঙ্গে ফেনী-১ আসনের বর্তমান এমপি বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে তিনি দেখাতে চান যে, ‘আমি এরশাদকে আপনার আসনে যেতে দেইনি। জোট হলে বা অন্য কোনোভাবে আমি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আসনটি চাই।’
এছাড়া সম্প্রতি ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খালেদা জিয়া জনসভা করেছেন। সেই মাঠে জনসভা করার বিষয়টিও অনেকে ভালো দৃষ্টিতে দেখছেন না। তাদের দাবি, সমাবেশে যদি উপস্থিতি কম হয় তাহলে জাপা ইমেজ সংকটে পড়বে কি না, তা নিয়েও ভাবা উচিত ছিল।
এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘লংমার্চের জনসভা এবং পথসভা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই।’ তবে তিনি নদী পাড়ে জনসভা অথবা পথসভার পক্ষে বলেছিলেন বলে উল্লেখ করে না হওয়ায় কোনো আক্ষেপ নেই বলেও জানান।
হাজী আলাউদ্দিনও বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই।’ লংমার্চকে তার নির্বাচনী শোডাউন করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা এ কথা বলেন, তারা খারাপ লোক।’
চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার বলেন, দলের মধ্যে কোনো ধরনের মতপার্থক্য নেই। লংমার্চের চূড়ান্ত কর্মসূচিকে স্বাগত জানান তিনি। শোডাউন সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু নদী তীরবর্তী এলাকা ফেনী-১ আসনটিতে জাপার সম্ভাবনা কম, সে ক্ষেত্রে সদর আসনটি দলের জন্য একটি সুযোগ। তাই এখানেই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো উচিত।
এ সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কাজী জাফর আহমদ সময়ের ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।