সংঘাত নয়, দু’দলই ব্যস্ত জনসমাগম বাড়াতে

সংঘাত নয়, দু’দলই ব্যস্ত জনসমাগম বাড়াতে

সংঘাত নয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জনসমাগমের বহর বড় করতেই মাঠে নেমেছে। অনেক উচ্চবাচ্য ও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত ১২ মার্চে কোনো কর্মসূচি রাখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জনসমাবেশের প্রতিযোগিতা হিসেবে আগামী ৭ মার্চ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গণর‌্যালি করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা ইতিমধ্যেই ৭ মার্চের গণর‌্যালি সফল করতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখাগুলোর সঙ্গে যৌথসভা করেছে।

অপরদিকে বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আগামী ১২ মার্চের ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে তৃণমূল থেকে ঢাকা মহানগর পর্যন্ত ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছে। দফায় দফায় কর্মিসভা করছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে সারা দেশে ৪৫টি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তিনি নিজেও সমাবেশ সফল করতে গুলশানে তার রাজনেতিক  কার্যালয়ে প্রতিদিন বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সামাজিক সংগঠন, সমমনা দল ও নিজ দলীয় অংগ ও সহযোগী সংগঠনের  নেতাদের সঙ্গে।

দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার সকালে ৩০টি সমমনা গণতান্ত্রিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক জনসমাগম করতে তাদের উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জনসংযোগ করার পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল।

এদিকে রাজধানীর প্রতিটি থানায় কর্মিসভা করেছেন বিএনপির মহানগর নেতারা। বৃহস্পতিবার থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মিসভা শুরু হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মিসভা করার জন্য ১০০টি টিম করা হয়েছে।

দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি থানা থেকে অন্তত তিন হাজার, জেলা থেকে দশ হাজার ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে পঞ্চাশ হাজার করে লোক আনা হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগর থেকেও চার লাখ লোক জড়ো করার কথা শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সব সময় সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছি। ১২ মার্চের কর্মসূচিও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চাই। সরকার যদি আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়, তাহলে সব দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে।’ তিনি বুধবার শাহবাগ থানার কর্মিসভায় আরো বলেন, ‘সরকার শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে বাধা দিলে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।’

এদিকে বিএনপির শরিক দল জামায়াত ১২ মার্চের মহাসমাবেশ সফল করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি করা হয়েছে। এ সমাবেশে জামায়াত তাদের দলের তিন থেকে চার লাখ কর্মী হাজির করতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক নুরুল ইসলাম বুলবুল।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম জানান, ‘ঢাকার সব থানায় কর্মী সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মিসভা শুরু হয়েছে। ওয়ার্ডে কর্মিসভা ও জনসংযোগ করার জন্য ১০০টি টিম গঠন করা হয়েছে।’ এছাড়া প্রচারের জন্য ৪৩টি কমিটি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি বাংলানিউজকে আরো বলেন, ‘আমাদের এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। শান্তিপূর্ণভাবে এই ঐতিহাসিক কর্মসূচি সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’

এদিকে বিএনপি মুখে বাধা দিলে প্রতিহত করার কথা বললেও জেলা ও থানা থেকে নেতা-কর্মীদের ১০/১১ মার্চের মধ্যেই ঢাকায় আসার নির্দেশ দিয়েছে। দলটি সংঘাত এড়াতে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের এই নির্দেশ দিয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘১২ মার্চ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেবে না। তবে ওই দিন বিরোধী দল নাশকতামূল কোনো কাজ করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ৭ মার্চের সকালের কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শোনানো হবে। এরপর বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। বিকেলে শিখা চিরন্তন থেকে শুরু হয়ে ধানমণ্ডি পর্যন্ত গণর‌্যালি করা হবে বলেও জানান তিনি।

হানিফ বলেন, ‘লাখো জনতার অংশগ্রহণে ওইদিন প্রমাণিত হবে, বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে আওয়ামী লীগের সামর্থ্য অনেক বেশি।’

৭ মার্চের এ র‌্যালি উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা।

তবে পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বিরোধী দলের ১২ মার্চের কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা দেবে না। তবে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হলে কঠোর অবস্থানে যাবে তারা।

রাজনীতি