এরশাদের সেতারে সুর উঠছে না। অনেক চেষ্টা করেও আগামী নির্বাচনে তিন শ’ আসনের প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করতে পারছেন না তিনি। বারবার তাগাদা দিয়েও জেলা নেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলেও পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, এককভাবে নির্বাচনের হাঁক ডাক ছাড়া সাবেক এই স্বৈরশাসক জেলা নেতাদের একাধিকবার গোপন নির্দেশনা দেন আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রাথীদের তালিকা জমা দেওয়ার জন্য।
এরশাদ অনেক জনসভায় তার পার্টির প্রার্থী সংকটের কথা উল্লেখ করলেও সম্প্রতি তার দল এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলেও ঘোষণা দেন।
বারবার বলার পরেও কোনোভাবেই ১৫০টির বেশি আসনের নামের তালিকা পাচ্ছে না তিনি। ঘুরে ফিরে ওই বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও ঢাকার আসনে প্রার্থীর তালিকাই জমা হচ্ছে।
গোপন নির্দেশনার পরেও প্রার্থীদের তালিকা না পাওয়ায় তিস্তা লংমার্চ থেকে ফিরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমানুয়েল সেন্টারে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সব আসনের প্রার্থীর তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন এরশাদ।
বৃহস্পতিবার তার ঘোষিত সময় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সব আসনের প্রার্থীর তালিকা এসে পৌঁছায়নি বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
তালিকা জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা জাপা মহাসচিব বলেন, ‘এখনও সব আসনের প্রার্থীর তালিকা এসে পৌঁছায়নি। সব তালিকা আসতে আরও ৫-৭ দিন সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে।’
ফেনী লংমার্চ নিয়ে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকায় তালিকা জমা দেওয়া সময় ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে আগামীকাল শুক্রবার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানা জাপা মহাসচিব।
ঠিক কতটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে সে বিষয়ে প্রকাশ না করতে চাইলেও প্রার্থী সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘পার্টি এখন খুবই শক্তিশালী। প্রতিটি জেলা ও উপজেলাসহ ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত পার্টির কমিটি রয়েছে। অনেক আসনে ৩ থেকে ৪ জন যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন।’
অনেক ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জাপায় যোগদানের জন্য যোগাযোগ করছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে আগেই নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য নিশ্চয়তা চাইছে। সে কারণে কিছু ক্ষেত্রে যোগদান ঝুলে রয়েছে।’
প্রাপ্ত তালিকার প্রার্থীদের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে গোপনে খোঁজ নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান জাপা মহাসচিব।
জাপার এক যুগ্ম মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিতে থাকা জাপার সাবেক নেতারা ঘরে ফিরতে যোগাযোগ করছেন। তবে তাদের জন্য আরপির একটি ধারাটি (দল পরিবর্তনের তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত সেই দল থেকে নির্বাচন করতে না পারা) অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরপিও ওই ধারাটি শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন না হলে জাপা একটি জোট গঠন করবে সেখানে বিএনপি আওয়ামী লীগে থাকা নেতারা দল গঠন করে যোগদান করবে বলেও জানান জাপার ওই যুগ্ম মহাসচিব।
প্রার্থী চূড়ান্ত করার পেছনে জাপার কয়েকটি রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে জাপা সূত্রে জানা গেছে। প্রথম যে কারণটি রয়েছে তা হচ্ছে, মহাজোটের ওপর ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বুঝানো যে জাপা মহাজোটে থাকছে না। একই সঙ্গে সরকারকে চাপে রাখা।
এ ছাড়া জাপা মনে করছে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে প্রধান দুই দলের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। তাতে যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না আসে তাহলে আওয়ামী লীগের নেগেটিভ ভোটে সরকার গঠন করতে চায় জাপা।
বিএনপি জোট নির্বাচনে না আসলে তাদের ভোটগুলো জাতীয় পার্টি পাবে এমনটাও ভাবা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নাকি এ ধরণের সিগন্যালও দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জাপার একটি সূত্র দাবি করেছে।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিএনপিও নাকি চায় আগামীতে এক তরফা ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন করুক আওয়ামী লীগ। একইভাবে জাপাও চায় আওয়ামী লীগ এক তরফা নির্বাচন করুক।
এক তরফা নির্বাচন হলে বিএনপি জাপার লাভ হচ্ছে তাদের মতো আওয়ামী লীগের গায়েও এক তরফা নির্বাচনের কালিমা লেপন করা। কারণ দল দুটির গায়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করার কালিমা রয়েছে, যা আওয়ামী লীগ অনেক সময় দম্ভের সাথে উচ্চারণ করে। তাদের সেই দম্ভ ভেঙে ফেলা।
জাপার ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও জানিয়েছেন বিএনপি জোট ছাড়া নির্বাচন হলে তারা গোপনে জাপাকে সমর্থন করবে। বিনিময়ে দেড় বছর পর সংসদ ভেঙে আবার নির্বাচন দেওয়ার বিষয়টিও অনেকটা কথা দিয়ে রেখেছে জাপা।
বিএনপি ধারণা করছে ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন করলে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ করা মোটেই সম্ভব নয়। যা তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, রাজনীতিতে অনেক সমীকরণ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে এ ধরণের আলোচনা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।