‘দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগুচ্ছে কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পেছাচ্ছে’ সমালোচকদের এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, “বিড়াল কালো বা ধলা হোক সেটা বড় কথা নয়। মূল কথা হলো দেখতে হবে বিড়াল ইঁদুর ধরে কী না?”
এসময় দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগুলো রাজনৈতিকভাবে কিভাবে পিছিয়ে থাকে এমন প্রশ্নও রাখেন সাবেক এই মন্ত্রী।
সোমবার দুপুরে কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত এসব কথা বলেন। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক স্মরণে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী।
খালেদা জিয়াকে জামায়তকে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, “আপনাকে (খালেদা জিয়া) বলছি, জামায়াতকে ত্যাগ করুন। জামায়াতকে বলবো যুদ্ধাপরাধীদের ত্যাগ করুন। উভয়কে বলবো, যুদ্ধাপরাধের বিচারে সহায়তা করেন।”
তিনি বলেন, “আন্দোলন করলে আপনার জন্য পথ খোলা আছে। তবে আন্দোলন সহিংস হতে পারবে না। আন্দোলন হতে হবে গণতান্ত্রিক, শাসনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিকভাবে পরিচালিত। আপনি যদি আবারো স্বপ্ন দেখেন আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও সহিংসতা করবেন তাহলে আপনি বোকার রাজ্যে বসবাস করছেন। আমি গণতান্ত্রিক মানুষ, হুমকি-ধামকিতে বিশ্বাস করি না।”
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, “ধৈর্য ধরুন। ভুলের মাশুল তো আপনাকে দিতেই হবে। ইচ্ছা হলে নির্বাচনে আসবেন, ইচ্ছা হলে আসবেন না। এভাবে সাংবিধানিক রাজনীতি হয় না। সাংবিধারিক রাজনীতি করলে পুরোপুরিই সাংবিধানিক হতে হবে।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বায়োবীয় বিষয় নয়, এতে নেতৃত্ব ছিল। মুজিব নগর সরকার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এটাই মুক্তিযুদ্ধের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইতিহাস। এটি বাংলাদেশ গেজেটে লিপিবদ্ধ করা আছে।”
আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, “ছেলে হিসেবে পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা ভালো। তাই বলে ইতিহাসকে অতিক্রম করে কিছু করা যাবে না। কথা বলতে গিয়ে খালেদা জিয়া একটা কথা বলেছেন, ইতিহাস তার নির্মম গতিতে চলবে, তাই যদি বুঝেন। তাহলে ইতিহাসকে তারই উপর ছেড়ে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিরোধী চক্রকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, এক ব্যাক্তির হাতে প্রশাসন চলে। একজনই একাধারে সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি সবকিছু। এগুলো ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। এগুলো নিয়ে এখন আর বাড়াবাড়ি করে লাভ নেই। ইতিহাস তার গতিপথেই চলবে।”
সুরঞ্জিত বলেন, “আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করে নতুন আওড় তুলেছেন। ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি’। তাহলে কে মুক্তিযুদ্ধ করেছে? আপনি তো পাকিস্তানি সেনাদের আশ্রয়ে ছিলেন।”
প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ করে সুরঞ্জিত বলেন, “অনেকে রাজনীতিবিদদের নিয়ে অনেক কথা বলেন। আব্দুর রাজ্জাক মৃত্যুর সময় অর্থসংকটে ভোগেছেন। তিনি ব্যাপক কর্মীবান্ধব ছিলেন। প্রগতিশীল রাজনীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আব্দুর রাজ্জাক। আমরা যত বেশি তাকে স্মরণ করবো, ততই আগামী বাংলাদেশকে গঠন করতে সাহায্য পাবো।”
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাজী মো. সেলিম এমপি’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, সহসম্পাদক আসাদুজ্জামান, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ।