পুঁজিবাজারে কারসাজি চিরতরে বন্ধে আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে: অর্থমন্ত্রী

পুঁজিবাজারে কারসাজি চিরতরে বন্ধে আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে: অর্থমন্ত্রী

আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘পুঁজিবাজারের কারসাজি চিরতরে বন্ধ করতে সরকার পুনর্গঠিত সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান যুগোপযোগী করছে।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সালমা ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহের যেসব অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে কারসাজি চলছে তা চিরতরে আইনগতভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আর এ জন্য পুনর্গঠিত কমিশন কর্তৃক সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান সংস্কারপূর্বক যুগোপযোগী করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রচলিত সিকিউরিটিজ আইনের আওতায় বাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে।’

জয়নাল আবদিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানান, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা গত ১৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি।
এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে বিচারিক আাদলতের বিভিন্ন আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ কর্তৃক উচ্চ আদালতে একাধিকবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত স্থগিতাদেশ। সাক্ষীর অভাব, তথ্য-প্রমাণাদির অপর্যাপ্ততা, বিচারিক আদালতে মামলার আধিক্য। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থ বছরের গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার ১৭ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে সরকারের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে সাত হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক থেকে সরকার ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা নতুন ঋণ গ্রহণ করেছে।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, উত্তরা, সাউথইস্ট, প্রাইম, এনসিসি, ন্যাশনাল, এবি, মার্কেন্টাইল, যমুনা ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট। নতুন ঋণ গ্রহণের বিপরীতে একই সময়ে সরকার ব্যাংকসমূহ থেকে পূর্বের নেওয়া ১৭ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে।

একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর এর চলার পথ কখনোই সমান্তরাল কিংবা মসৃণ নয়। চলমান বিশ্বের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেও অর্থনীতির এ বিভিন্ন উত্থান-পতনগুলো লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোকে বর্তমানে মন্দা-উত্তর পরিস্থিতিতে নানামুখী চাপের কারণে মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব বৃদ্ধিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিকাশমান ও উন্নয়শীল অর্থনীতির দেশসমূহে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বেশী লক্ষ্য করা যায়। তাই ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ মূল্যস্ফীতির একমাত্র কারণ বা প্রধান কারণ এমন ধারণাটি সঠিক নয়।

নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের শুরুতে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল পাঁচ হাজার ৩৪৯ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে এসে রিজার্ভ হয়েছে নয় হাজার ৮৫৬ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন  মার্কিন ডলার। বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ৯ ভাগ।

অপরদিকে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময় অর্থাৎ ২০০৫ সালের ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ২৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০০৬ সালের ৩০ জুন এর পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৪৮৩ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ২২ ভাগ।

সারাহ্ বেগম কবরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ১৪ হাজার ১২৯ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।

এরমধ্যে ১১ হাজার ৭৭০ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং দুই হাজার ৩৫৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান। একই সময়ে ডিসবার্সমেন্ট হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৩৯ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে তিন হাজার ৮৭৩ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং দুই হাজার ৬৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান।

মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশের অর্থনীতি সংকটাপন্ন এবং মূল্যস্ফীতি উদ্বেগজনক কথাটি সঠিক নয়। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও মুদ্রাস্ফীতি আছে সত্য, তবে তা অবশ্যই উদ্বেগজনক পর্যায়ে নয়। গত তিন বছরে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬৬, সাত দশমিক ৩১ এবং আট দশমিক আট শতাংশ। যা অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় কম।

গত বছরের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স-এর পরিমাণ হ্রাস, ডলারের বিপরীতে টাকার অবচিতির ফলে চলতি অর্থ বছরে জিডিপি’র কাঙ্খিত উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা ঝুঁকি দেখা দেয়। সেজন্য দেশবাসীকে পূর্বে থেকেই সচেতন করা হয় যে চলতি অর্থ বছরে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত অভিঘাত মোকাবিলার জন্য আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী বর্তমানে (২০১০-২০১১ অর্থ বছরে) জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছয় দশমিক সাত শতাংশ এবং মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮১৮ মার্কিন ডলার। পূর্ববর্তী অর্থ বছরের তুলনায় আট দশমিক নয় শতাংশ বেশী।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থ বছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত শতাংশ।

শাম্মী আক্তারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত অর্থ বছরের অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা (এনবিআর অংশ) ছিল ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৪০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ১০৫ দশমিক তিন শতাংশ। পূর্ববর্তী অর্থ বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশী।

সাধনা হালদারের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে আয়কর আদায়ের আনুপাতিক লক্ষ্যমাত্রা নয় হাজার ৫১২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১০ হাজার ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

মো. তাজুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাণিজ্যিকভাবে সুতা আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের কোনো পরিকল্পনা আপাততঃ সরকারের নেই। সুতা আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে সুতার Cotton-এর ওজনভেদে আমদানি শুল্ক ৫% এবং ১২%, ভ্যাট ১৫%, এআইটি ৫% বলবৎ আছে।

তবে বন্ড সুবিধার আওতায় back to back L/C-এর মাধ্যমে বিনা শুল্কে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানির বিধান রয়েছে।

একই সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার বিভাগের এলজিইডি’র আওতায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। গত তিন বছরে এলজিইডি’র মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ১১ হাজার ৬৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, এক লাখ এক হাজার ৬৬৫ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মাণ, ৭৭১টি গ্রোথ সেন্টার/হাটবাজার উন্নয়ন, ৬৮টি ঘাট, ৭৪২টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন এবং ১০টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০ হাজার ৫২ কিলোমিটার সড়ক এবং ৪৯ হাজার ৩৫০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।

বেসরকারি বেতার

মো. রহমত আলীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ১৯৯১-এর দ্বিতীয় তফশীল দ্বারা বেতার সম্প্রচারের উপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন প্রচারের উপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে।

গত তিন বছরে রেডিও টু-ডে, রেডিও ফুর্তি, রেডিও এবিসি এবং রেডিও থেকে আদায় করা রাজস্বের পরিমাণ সাত কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

এর আগে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার শওকত আরীর সভাপতিত্বে চলতি অধিবেশনের ২০তম কার্যদিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ খবর