কুমিল্লা জেলায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, অনুকূল আবহাওয়া, মৌসুমের শুরুতেই বীজ বপণ, ঘন কুয়াশা ছাড়া পর্যাপ্ত শীত, পরিমিত সুষম সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণেই ভালো ফলন সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় সার ও বীজের দাম কম হওয়ায় এবার কম উৎপাদন খরচে দ্বিগুন লাভে আলু বিক্রি করতে পারছে কৃষক। এতে গত বছরের লোকসনাও পুষিয়ে যাচ্চে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ১৬ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে দাউদকান্দিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর আলু চাষে ব্যাপক লোকসান হওয়ায় এবার অনেক কৃষকই আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে এবার জেলার ১৫ শতাংশ কৃষক আলুর আবাদ করেননি। ফলে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ১৬টি উপজেলায় এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র ছিল ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর। কিন্তু কৃষকদের অনাগ্রহে চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৫৯০ হেক্টর।
গত বছরের তুলনায় এবার সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম কম হওয়ায় আলু চাষে কৃষকদের খরচ ছিল অনেক কম। অধিক ফলনের আশা না করে পরিমিত জৈব সার ব্যবহার, উন্নত বীজ, চাষাবাদের উপযোগী আবহাওয়া ও বালাইমুক্ত পরিবেশ থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস এবছর হেক্টর প্রতি ১৮ দশমিক ১০ মে. টন হিসেবে জেলার ১২ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ মে. টন আলুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে হেক্টর প্রতি ২০-২২ মে.টন হিসেবে জেলায় প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার মে. টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবছর জেলার সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে দাউদকান্দি উপজেলায়। ওই উপজেলার আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। বিপরীতে চাষাবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৫ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে কৃষকদের খরচ হয়েছে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮-৯ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা।
আলুর অধিক ফলন ও দ্বিগুন দাম পাওয়ায় কৃষকরা গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এবার অধিক লাভবান হবেন।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার রারিরচর গ্রামের আব্দুল অদুদ মিয়া (৩৫) বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার আলুর আকার ভালো। কোন রকম দাগ ও পচন নেই। তিনি ৫৫ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন।
অদদু জানান, মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকসহ তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৩০ শতক জমি থেকে ৮০ মন আলু ঘরে তুলেছেন তিনি। তিনি আশা করছেন সম্পূর্ণ জমি থেকে প্রায় দেড়শ মন আলু পাবেন। বর্তমান বাজার দর হিসেবে দাম আসবে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।
উপজেলার মধুসাইর গ্রামের আলু চাষি সাব্বির আহম্মেদ (৩০) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার জন্মের পর আলুর এমন ফলন কখনও দেখিনি। আমি ২৫০ শতক জমিতে আলুর চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ৬০ শতক জমির আলু তুলেছি। এখনই আমার ঘরে রাখার মতো জায়গা নেই’।
ইতোমধ্যে ৬০ শতক জমি থেকে তিনি ২২০ মন আলু পেয়েছেন বলে জানান।
চান্দিনা উপজেলা রারিরচর গ্রামের আলু চাষি আবদুল বারেক, ছায়কোট গ্রামের শামছুল হক ও হারং গ্রামের ছোবহান মিয়া, শ্রমিক রাবিয়া, আছমা, খোরশেদাসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষ করা হয়। এ সময়ে আলু তোলার কাজে ব্যস্ত প্রায় ৫০ হাজার কৃষি শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই মহিলা।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শহিদ উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, এবছর আলু চাষে কৃষকদের রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার বেশি ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়ায় এবং উন্নত বীজ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে।
মৌসুমের শেষ পর্যন্ত আলু সংরক্ষণে কোনো অসুবিধা না হলে এবং বাজার মূল্য ঠিক থাকলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে বলে তিনি জানান।।