দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সন্দেহজনক লেনদেন স্থগিত করতে পারবে, এমন বিধান রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল চূড়ান্ত করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। কমিটির সভাপতি মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য মো. রহমত আলী, শেখ ফজলে নূর তাপস ও ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যোগ দেন। এছাড়া দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ও আইন সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের কোনো কর্মকর্তা যদি হয়রানির জন্য কারও লেনদেন স্থগিত রাখে তবে সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বিলে।
এছাড়া কমিটির চূড়ান্ত করা বিলটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), মহা হিসাব নিরীক্ষক, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুদককে তথ্য দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। দুদককে তথ্য না দিলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে এতে।
দুদক আইন সংশোধনে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের একটি প্রস্তাবও কমিটির বৈঠকে উপস্থান করা হয়। সংসদীয় কমিটি ওই প্রস্তাবের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন সংসদ কাজে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। পরে বিলটি পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করতে হলে সরকারের আগাম অনুমতির প্রয়োজন হবে, এমন বিধান রাখা না রাখা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
সংসদীয় কমিটির সদস্য মো. রহমত আলী বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী সংসদীয় কমিটি দুদক আইন সংশোধনের বিলটি চূড়ান্ত করেছে।’ তিনি জানান, কমিটি বিলটি সংসদে উত্থাপন করবে। পরে সংসদ চাইলে এ বিলে পরিবর্তন আসতে পারে।
আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, দুদক চাইলে দুর্নীতি সন্দেহে কোনো লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করতে পারবে। কমিশন চাইলে ওই লেনদেন আরও ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করতে পারবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে যদি মনে হয়, কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি করে সম্পদ অর্জন করেছে তবে ওই সম্পদ (দেশের ভেতরে ও বাইরে) ৬০ দিনের জন্য জব্দ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত এ বিধানটি মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা যদি কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলকভাবে সম্পদ জব্দ করে তবে ওই কর্মকর্তাকে দুই থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার হবে। এছাড়া হয়রানির শিকার ওই ব্যক্তি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
কমিটির চূড়ান্ত করা বিলে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। ওই কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।