একটানা ঘণ্টাখানেক লড়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (এমএমসি) হাসপাতালের ৫শ’ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবনের আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন দমকল কর্মীরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড.আ.ফ.ম.রুহুল হকের এ নতুন ভবনটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ৯তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের ৮ম তলায় হঠাৎ করেই আগুন লাগে।
খবর পেয়ে দমকলের কয়েকটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘণ্টাখানেক প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
আগুনে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ লেখা সাইনবোর্ডটি পুরোপুরি পুড়ে গেলেও মূল ভবনে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।
হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শাহজাহান জানান, ‘রাত ১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল লেখা ইলেকট্রনিক সাইনবোর্ড থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে নব-নির্মিত ৯তলা ভবনের ৮ম তলায় আগুন লাগে।’
ময়মনসিংহ দমকলের স্টেশন অফিসার আতিকুর রহমান রাত দু’টার পর আগুন নিভিয়ে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ নতুন ভবনটি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. আ.ফ.ম.রুহুল হক। নব-নির্মিত এ ভবনে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে নতুন ও আধুনিক সুবিধাগুলোর অনেক কিছুই রয়েছে। জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ শেষ হবার পর এ ভবনটি চালু হতে যাচ্ছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় কলেজের ২৫ বছর পূর্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ হওয়া বার্ষিকীতে ঢালাওভাবে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্তি ও ছাত্রলীগের নেতাদের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।
এ ঘটনার মাত্র আড়াই ঘণ্টা পরই নব-নির্মিত ভবনের ৮ম তলায় আগুন লাগে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে এ হাসপাতালটি ৮শ’ শয্যার হলেও এখানে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৮শ’ থেকে আড়াই হাজার রুগী ভর্তি থাকে। চিকিৎসাসেবা বা ওষুধ তো দূরের কথা, একটি শয্যা পাওয়ার জন্যও এখানে রুগীদের তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হয়।
একই সূত্রমতে, ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর ৫শ’ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এ কাজের দায়িত্ব পায় রেজা কনস্ট্রাকশন। আর ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগ নির্মাণ কাজে তদারকি করে।
গণপূর্ত বিভাগের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৯ তলা বিশিষ্ট এ ভবনে জায়গার পরিমাণ ৩ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গফুট। ভবনের দরজা-জানালা, টাইলস, মার্বেল পাথর, থাই অ্যালুমিনিয়াম বসানো হয়েছে।
৫শ’ শয্যার এ হাসপাতাল ভবনে রয়েছে ১শ’ ৮টি কেবিন। প্রায় সাড়ে ৫০ কোটি টাকায় পুরো ভবনের নির্মাণ কাজ হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষে এ ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শাহজাহান বলেন, ‘উদ্বোধনের পরপরই এ হাসপাতালের নতুন ভবনে চিকিৎসাসেবা চালু হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে এ ভবনটি উদ্বোধনের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু তিনি ময়মনসিংহ সফরে না আসায় শুক্রবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ২৫ বছর পূর্তির সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তার সফর বুধবার বাতিল হয়ে যায়। তবে রাষ্ট্রপতির প্রদত্ত ভাষণ তার পক্ষ থেকে একজন পড়ে শোনাবেন বলে নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডা. মতিউর রহমান।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. আ.ফ.ম.রুহুল হক এ নবনির্মিত ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অ.)মুজিবুর রহমান ফকির এমপি।