ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) প্রথম আসরে খেলে আশরাফুল দেশে ফেরার পর সবার একটি জিজ্ঞাসা ছিল, শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে কাটানোর অভিজ্ঞতাটা কেমন! সত্যিই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য বিষয়টা স্বপ্নের মতো। গ্রেট ক্রিকেটারদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে শেয়ার করা, একসঙ্গে অনুশীলন করা, সময় কাটানো, গল্প করা_ যে কোনো দেশের তরুণ ক্রিকেটারের জন্য এটা আরাধ্য একটা ব্যাপার। সাকিব-আশরাফুলরা হয়তো আইপিএলের বদৌলতে সে সুযোগটা পেয়েছেন। কিন্তু মুমিনুল হক সৌরভ বা আনামুল হক বিজয়ের মতো সদ্য কৈশোর পেরোনোদের জন্য তো এটা এখনও স্বপ্নের মতো। আর বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের সে স্বপ্নদুয়ারে পেঁৗছে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মতে, বিপিএল দিয়ে দারুণভাবে উপকৃত হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। যেসব স্থানীয় ক্রিকেটার বিপিএলে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো অভিজ্ঞতা। সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক আবহের একটা টুর্নামেন্ট বিপিএল। বড় ক্রিকেটারদের সাহচর্যে অনেক কিছু শেখার আছে। বিপিএল ছাড়া এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সবাই জানে, বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেলে ক্রিকেটাররা বেশ ভালো টাকা পায়। টাকা অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পাওয়া টিপসগুলো, তাদের কাছ থেকে দেখা, তাদের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ অমূল্য। আমরা যে এ টুর্নামেন্ট থেকে কী পেয়েছি সেটা একজন খেলোয়াড় ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না।’ তিনি আরও জানান, বিপিএল তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাকে হাতের কাছে এনে দিয়েছে, ‘আসলে যে ছেলেটা জাতীয় দলে ঢোকার আগেই ক্রিস গেইল, শহিদ আফ্রিদি, সাঈদ আজমলের মতো বড় তারকার সঙ্গে খেলে ফেলেছে, তার কাছে জাতীয় দলে খেলাটা কোনো ব্যাপারই মনে হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ বিপিএল দিয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি ভালো করেই জানি এটা কতটা উপকারী। ক্রিকেটের পরবর্তী স্তরের প্রস্তুতির জন্য বিপিএল আমাদের ক্রিকেটারদের একটা প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে। আমাদের দেশে ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যায় পড়ে। এখন এ মানিয়ে নেওয়াটা একেবারেই সহজ হয়ে যাবে।’
সাকিবের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন বাংলাদেশের আরেক তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাও। দেশসেরা এ পেসারও বলেছেন, ‘আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য বিপিএলে একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পুরো আবহটা এখানে আছে।’ বিপিএল নিয়ে একটি চমৎকার কথা বলেছেন বরিশাল বার্নার্সের অধিনায়ক ব্রাড হজ। এ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের মতে, ‘যে কোনো খেলার প্রাণ হলো দর্শক। দর্শক থাকলে সে খেলা এগিয়ে যাবেই। আর বিপিএলে প্রচুর মানুষ আসছে মাঠে। সবাই ভীষণ উৎসাহী। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার।’ তবে বিদেশি ক্রিকেটাররা পর্যন্ত যেখানে বিপিএলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম যেন কিছুটা নাখোশ। অবশ্য সেমিফাইনালে তার দল দুরন্ত রাজশাহীর পরাজয়ের পরই তিনি আয়োজকদের ব্যর্থতা এবং তাদের পাওনা নিয়ে কিছুটা বেপরোয়া ঢঙে কথা বলেন। সেদিক দিয়েও সাকিব ইতিবাচক, ‘প্রথমবারের আয়োজনে কিছুটা ভুলত্রুটি হতেই পারে। এসব মেনে নেওয়া উচিত। আর ফ্র্যাঞ্চাইজির ওপর আমার বিশ্বাস আছে। তারা সময়মতোই টাকা পরিশোধ করবে।’
তবে বিপিএল কিন্তু আরও একটা বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সেমিফাইনালে আশরাফুলের ব্যাট চালানো দেখে বাংলাদেশের এক ক্রিকেট বোদ্ধা তো অবাক! কোন জাদুমন্ত্রবলে আচমকা এমন বদলে গেলেন আশরাফুল! আসলে জাদু-মন্ত্র-তন্ত্র কিছুই না। আশরাফুলের সঙ্গে তখন ব্যাট করছিলেন শহিদ আফ্রিদি। প্রতিটি বলের পর আশরাফুলকে এসে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। বড় ভাইয়ের মতো কাঁধে হাত রেখে কথা বলছিলেন। আশরাফুলকে নিশ্চিত করেই ব্যাটিংয়ের তালিম দিচ্ছিলেন না আফ্রিদি। দিচ্ছিলেন নির্ভরতা। তাই দেখে আক্ষেপ হয়, বাংলাদেশ দলেও যদি আশরাফুলদের মাথার ওপর ছাতা ধরার মতো এমন কেউ থাকত!