আমেরিকার আড়াইশ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার অপেক্ষায় রয়েছে এ দেশের মানুষ। অন্তত জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাথমিক ফলাফলে তাই দেখা যাচ্ছে। যদিও নির্বাচনের জন্য এখনও দুই বছর বাকী রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্বতির¡ চিরাচরিত ধারা অনুযায়ী দুই বছর আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রচার প্রচারণা। বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও হিলারীকে নিয়ে শুরু হয়েছে মাতামাতি। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী অংশ নিচ্ছে ‘ রেডি ফর হিলারী’ ক্যাম্পেইনে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৮ সালে ডেমোক্রেট দলীয় মনোয়ন পেয়ে এবং নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই ইতিহাস সৃষ্টি করেন। কারণ তিনিই ৪৪তম এবং একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও বিজয়ী হয়েছেন। একজন কৃষ্ণাঙ্গ অথবা একজন নারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বা এই পদে লড়তে পারেন সেটা মাত্র একযুগ আগেও যুক্তরাষ্ট্রে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। পরিস্থিতির পালাবদলের ফলে হিলারী ক্লিনটনও একজন নারী হিসেবে প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেটদের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জরিপগুলো জানাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ‘রেডি ফর হিলারী’ ক্যাম্পেইন শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিক এই ক্যাম্পেইনে বিভিন্ন পেশার ৩০ লাখ সমর্থক নাম লিখিয়েছে। যাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীও রয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট এরই মধ্যে হিলারীকে স্পন্সর করেছেন। ‘ রেডি ফর হিলারী ’ ক্যাম্পইনের জন্য ২৫ হাজার ডলার অনুদানও দিয়েছেন। একইসাথে তিনি বলেছেন , ‘আমি বাজী ধরে বলতে পারি, ‘২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারীর চেয়ে যোগ্য প্রার্থী আর নেই। সুতরাং তাকেই বিজয়ী করতে হবে।’
এদিকে, ১০ ডিসেম্বর এনসিবিএস এর ‘মিলিয়নিয়ার চয়েস ফর প্রেসিডেন্ট ২০১৬’ জরিপেও হিলারী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। আমেরিকার পাঁচ শতাধিক মিলিয়নিয়ারের উপর এই জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ডেমোক্রেট সমর্থক মিলিয়নিয়াদের মধ্যে ৭২ ভাগ হিলারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায়। প্রতিদ্বন্ধি অপর ডেমোক্রেট প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেনকে চায় ১৪ ভাগ মিলিয়নিয়ার। ডেমোক্রেটদের মধ্যে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী ডাব্লিউ বুশের ছেলে জেব বুশকে চায় মাত্র এক ভাগ মিলিয়নিয়ার।
অন্যদিকে রিপাবলিকান সমর্থক মিলিয়নিয়ারদের মধ্যে ৩৬ ভাগ জেব বুশকে এবং দলীয় অপর প্রতিদ্বন্দি স্কট ওয়াকারকে চায় ১৯ ভাগ মিলিয়নিয়ার। রিপাবলিকান মিলিয়নিয়ারদের মধ্যে অবশ্য পাঁচ ভাগ চায় হিলারীই প্রেসিডেন্ট হউক। উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যেও হিলারী এগিয়ে রয়েছেন জরিপের ফলাফলে।
সদ্য সমাপ্ত মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডেমোক্রেটদের ভরাডুবির পর ওবামা নিজেও বলেছেন, ‘হিলারী হতে পারেন একজন যোগ্য প্রেসিডেন্ট। আমার অনেক মতের সাথেই হয়তো তার দ্বিমত থাকতে পারে, তবে আমি বলবো তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। ’
৬৭ বছর বয়সের হিলারী সাবেক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী। পেশায় আইনজীবি হিলারী ক্লিনটন টানা দুইবার সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। ওবামার ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও ছিলেন ছিলেন। যদিও তিনি ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলীয় মনোনয়নের চেষ্টা করেও জনমত জরিপে ওবামার কাছে হেরে যান।
মার্কিন নির্বাচনে জনপ্রিয়তা প্রমান হয় তার ‘ফান্ড রেইজিং’ এর অংক দেখে। যে যতো জনপ্রিয় তার ফান্ড রেইজিং হয় তত বেশি। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচার প্রচারণার পেছনে ব্যায় হয়েছিল ছয় বিলিয়ন ডলার। প্রতিদ্বন্ধি রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির চেয়ে ওবামা ওই নির্বাচনের অনেক বেশি ফান্ড রেইজ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্যাপক ব্যায়বহুল প্রচার প্রচারণা, নির্বাচনী ব্যায় আর ফান্ড রেইজিং নিয়ে সারাবিশ্বে হইচই পড়ে গিয়েছিল তখন। ২০১৬ সালে এই ব্যায় দ্বিগুন হতে পারে বলে ধারণা করছে জপির প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই হিসেবে বিত্তশালীরা হিলারীকে সমর্থন দিলে ডেমোক্রেট মনোনয়ন পাওয়া এবং বিজয়ী হওয়া অসাধ্য নয় বলেই আমেরিকানদের ধারনা। ‘রেডি ফর হিলারী’ শুরু হবার পর এরই মধ্যে হিলারীর নির্বাচনী ফান্ডে ১০ মিলিয়ন ডলার জমা হয়ে গেছে।
এদিকে হিলারীকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ‘ রেডি ফর হিলারী’র আয়োজনে দুটি সমাবেশ হয়েছে যেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীও হাজির ছিল।
‘ রেডি ফর হিলারী’র অন্যতম সংগঠক মূল ধারার রাজনীতিবিদ বাংলাদেশী গিয়াস আহমেদ ওই সমাবেশে বলেন, ইতিপূর্বে আমরা ওবামাকে বিজয়ী করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সব আশা পূরণ করতে পারেননি। আশা করছি এবার হিলারী মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে ভোটারদের সব প্রত্যাশা পূরণ হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদের শতকরা ৯৯ ভাগ ভোটারই ডেমোক্রেটদের সমর্থক।
মূলধারার রাজনীতির সাথে জড়িত যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের এটর্নী এ্যাট ল’ মঈন চৌধুরী বলেন, ‘হিলারী একজন জনপ্রিয় মানুষ। তার মনোয়ন পাওয়া এবং বিজয়ী হওয়া দুটোরই সম্ভাবনাই অনেক বেশি।
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সকল নির্বাচনী কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালককারী জেরি ক্রোফোর্ড বলেছেন, হিলারীর পক্ষে এখনই যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটা তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ । অবশ্য ওই বছরের মধ্য জানুয়ারি থেকেই প্রাইমারী ইলেকশন শুরু হবে। আগামী জানুয়ারি থেকেই প্রধান দুই দলের প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের নিজেদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।