ইউক্রেন নীতির জেরে রাশিয়াকে কোণঠাসা করেছে পশ্চিমি দুনিয়া। তার উপরে দীর্ঘ দিনের বন্ধু ভারতও ক্রমে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে। এই অবস্থায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি-সফরকে ‘বন্ধু খোঁজার চেষ্টা’ হিসেবে দেখছে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম। ভারতের কূটনৈতিক শিবিরে অনেকেই অবশ্য মনে করেন, বন্ধু ‘খুঁজতে’ নয়, বিপদের দিনে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতেই পুতিনের এই ভারত-সফর। আর তাতে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, ‘ভারতের বিদেশনীতিতে এই সম্পর্কের গুরুত্ব ক্রমশই বাড়বে।”
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের আমল থেকে। অস্ত্র রফতানি থেকে শুরু করে আর্থিক সাহায্য সময়ে-অসময়ে নানা ভাবে ভারতকে সাহায্য করেছে রাশিয়া। পরিবর্তে ভারতও রাশিয়াকে সমর্থন করে গিয়েছে। এমনকী কিছু দিন আগেও ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার অধিকারের সপক্ষে মুখ খুলেছিল ভারত। সে দিক থেকে দেখলে নয়া দিল্লি-মস্কো বন্ধুত্ব বেশ গভীর। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সেই ধারা বজায় রেখেছিলেন। এমনকী তার উত্তরসূরি মোদিও রাশিয়ার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলছেন। তবে ভারতের তরফে সামান্য অস্বস্তি ছিলই। তার কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি। ফলে সুসম্পর্কের ধারা বজায় রাখলেও পাকিস্তান-রাশিয়া সম্পর্কের দিকে নজর রাখছিল মোদি সরকার।
অন্য দিকে ক্রেমলিনের নজর ছিল মোদি-আমেরিকা সম্পর্কের দিকে। আসলে আমেরিকায় একদা ব্রাত্য মোদির সঙ্গে যে ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, তাতে কিছুটা চিন্তিত রুশ প্রশাসন। কারণ পুতিন বিলক্ষণ জানেন, চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিধর দেশ হিসেবে উঠে আসছে রাশিয়ার পুরনো বন্ধু ভারত। অন্য দিকে ইউক্রেন নীতির জেরে রাশিয়া এখন কার্যত একা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপানো নিষেধাজ্ঞার জেরে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে তার অর্থনীতিতে। নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদের রফতানির জন্য এখন তাই নতুন বাজার খুঁজছে রাশিয়া। এই অবস্থায় সঙ্গত কারণেই নয়া দিল্লির সঙ্গে নিজেদের পুরনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে চাইছে ক্রেমলিন। যাতে আর্থিক দিক থেকে তো বটেই, কূটনৈতিক দিক থেকেও ভারতকে পাশে পেতে পারে রুশ প্রশাসন।
সে জন্যই একগুচ্ছ চুক্তির উপহার নিয়ে এসেছিলেন পুতিন। তার মধ্যে বেশিরভাগই এমন, যাতে ভারতের লাভ হতে পারে। উদ্দেশ্য একটাই। ভারতের কাছে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখা। যদিও কারও কারও মতে, এ মুহূর্তে ভারতের যতটা রাশিয়াকে প্রয়োজন, তার থেকে ঢের বেশি রাশিয়ার দরকার ভারতকে।
সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন মোদিও। পরমাণু, প্রতিরক্ষা সমঝোতার পাশাপাশি রাশিয়া থেকে আরও বেশি হিরে কাটার ব্যবসা ভারতে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। কূটনীতিকদের মতে, রাশিয়ার বাড়ানো বন্ধুত্বের হাতকে আরও শক্ত করে ধরতে চাইছেন মোদি।– সংবাদ সংস্থা।