এখানে মানবজমিনের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো।
সরকারের কঠোর অবস্থানে চরম বেকায়দায় জামায়াত। যুদ্ধাপরাধে নেতাদের বিচার। দল নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা। জোট ও নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ। একাধিক ইস্যুতে জামায়াত যখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত, তখনই জনমনে আসছে নানান প্রশ্ন। দলের এই চরম দুর্দিনে কি চায় জামায়াত? সরকারের সঙ্গে সমঝোতা? সংঘাত। নাকি নিষিদ্ধ হওয়া? এত সব প্রশ্ন মানুষকে বিভ্রান্ত করলেও এর কোন জবাব মিলছে না। বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে সমঝোতার বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও জামায়াত এ ব্যাপারে নীরব থাকছে। ফলে মন্ত্রীদের বক্তব্য সহজে কেউ বিশ্বাস করতে চাইছেন না।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আন্দোলন ও দলে সংস্কার প্রস্তাবে বর্তমানে তাদের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও সরকারের সমঝোতা প্রস্তাবে তারা রাজি নন। এতে যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধও করা হয় তাতে তাদের আপত্তি নেই। কারণ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন প্রায় ৯৯ ভাগ বয়সে তরুণ। বর্তমানে নেতৃত্বে আসা নতুন নেতাদের সবাই যুদ্ধাপরাধসহ বিতর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের দায় নিতে চাইছেন না। নতুনরা চান কলঙ্কিত জামায়াতের বদলে নতুন দলের নেতৃত্ব। এ নিয়ে দলের ভেতরে চলছে তোলপাড়। এ কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রশমনে জামায়াত এখন ব্যস্ত। এমন অবস্থায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা তো দূরের কথা, আলোচনারও সময় নেই বলে জামায়াত নেতারা জানান।
জামায়াতের কর্মপরিষদের একাধিক সদস্য জানান, বর্তমানে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের পক্ষে আন্দোলন ও সংস্কার নিয়ে দলে মতবিরোধ এখন তুঙ্গে। এ কারণে বর্তমান কঠিন সময়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত নয় জামায়াত। দলের ভেতরের মতবিরোধ সাংগঠনিক কার্যক্রমকে দুর্বল করে দিয়েছে। তরুণ নেতৃত্বের বিশাল অংশ যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আন্দোলনের পক্ষপাতী নন। এ কারণে সম্প্রতি নেতাদের মুক্তির দাবিতে দেয়া কর্মসূচিতে শিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেননি। বিষয়টি হতাশ করেছে জামায়াতকে। কারণ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান শীর্ষ নেতাদের মুক্তির আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও দলের তরুণ নেতাদের মতবিরোধ তাদেরকে বেকায়দায় ফেলেছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতের এমন দুরবস্থার পেছনে মূল কারণ সংস্কার দাবি মেনে না নেয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের ভরাডুবির পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী অভিযুক্তদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়া, নতুন নামে দল গঠন করাসহ আরও কিছু কর্মপন্থা নিয়ে জামায়াতের তরুণ নেতারা সক্রিয় হন।
সূত্রমতে, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সে দাবি আরও জোরদার হয়। তখন থেকেই জামায়াত দু’টি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর একটি ধারায় সিনিয়র নেতারা। তাদের বিরুদ্ধে দেশ স্বাধীনে বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে। অপর ধারায় তরুণ নেতারা। তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব দানকারী বিশাল একটি অংশের সবাই ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে এসেছেন। তাই দলের বর্তমান অবস্থায় তারা দায় নিতে চাইছেন না। তারা মনে করছেন দলে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে এ দায় একান্তই তাদের। কারণ বর্তমানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রশিবির থেকে আসা অনেকেরই দেশের স্বাধীনতার সময় জন্ম হয়নি। যাদের জন্ম হয়েছে তাদের বয়স ছিল অল্প। তাই বর্তমান সময়ে এসে তারা যুদ্ধাপরাধের তকমা নিতে রাজি নন। এ জন্য দলের বিশাল এ অংশ পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মতে, লোকবল ও নেতৃত্ব সব দিক দিয়ে জামায়াত দেশের অন্যতম শক্তিশালী ও বড় দল। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু যুদ্ধাপরাধের বদনামে দলটি বারবার পিছিয়ে পড়ছে। এখন দলকে এগিয়ে নিতে ও সর্বসাধারণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে তারা সংস্কার চান। এর বাস্তবায়ন একমাত্র নিষিদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। এ জন্য তারা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে নতুন দলের নামও ঠিক করে রেখেছেন তারা। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে যাতে অল্প সময়ের মধ্যে নতুন দলের কার্যক্রম শুরু করা যায় তার সব প্রস্তুতি তাদের রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
‘সরকার-জামায়াত সমঝোতা হলে দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে’ মন্তব্য করে জামায়াতের কর্মপরিষদের আরেক সদস্য জানান, জামায়াত একাধিকবার সরকারের সমঝোতা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কারণ আদর্শের দিক দিয়ে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ একে অন্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি জানান, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার যে একদম একা হয়ে গেছে জামায়াতকে দেয়া প্রস্তাবে তা আরও পরিষ্কার হয়েছে। জামায়াতের এই নেতা জানান, সরকার তাদেরকে বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে সমঝোতায় আসতে প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়েছিল, যেহেতু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল সংবিধান রক্ষার তাই প্রতিদ্বন্দ্বী দল না পাওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচনে যেতে পারছেন না। এ ব্যাপারে জামায়াতের সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরে জামায়াত নেতারা বৈঠকে বসে এ নিয়ে আলোচনা করে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ জামায়াত মনে করে, এমন প্রস্তাবে রাজি হলে তাতে সরকারই বেশি লাভবান হবে।
তাদের মতে, একতরফা নির্বাচনের পর ঘরে-বাইরে সরকারের যে অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে তাতে ক্ষমতায় টিকে থাকা সরকারের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই সরকার চায় নির্বাচনে বিএনপিকে বাদ দিয়ে তাদের প্রয়োজন এমন একটি দল যারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে কিন্তু সরকার গঠন করতে পারবে না। এদিক দিয়ে সরকারের দৃষ্টিতে জামায়াতই উপযুক্ত দল। কারণ জামায়াত এ মুহূর্তে নির্বাচনে গেলে সরকার গঠনের মতো জনসমর্থন পাবে না। কিন্তু সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যথাযথ ভূমিকার শক্তি সামর্থ্য তাদের রয়েছে- যা বৈধভাবে একটি সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়ক। এমন ধারণা থেকে জামায়াত তাতে সাড়া দেয়নি।
তরুণ এই নেতা জানান, জামায়াত যদি সরকারের এই প্রস্তাবটি মেনে নিতো তবে নেতাদের ভাগ্য অন্যরকম হতো।
জামায়াতের কর্মপরিষদের এক সদস্য জানান, জামায়াতের নেতৃত্ব ধীরে ধীরে এখন নতুনদের হাতে চলে যাচ্ছে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই এর পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব তরুণদের হাতেই চলে আসবে। দলের বর্তমান তরুণ নেতারা এমনটি উপলব্ধি করতে পেরে এখন সংস্কারে উদ্যোগী হয়ে উঠছেন। তারা চান জামায়াত বিলুপ্ত করে নতুন দলের নেতৃত্বে আসতে। তাই এ মুহূর্তে তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় নয়, দলের বিতর্কিত বিষয়গুলোর সুরাহার বিষয়ে অনড়।
তিনি জানান, তারা মনে করছেন সরকার নিজের প্রয়োজনেই জামায়াতকে জীবিত রাখবে। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে জামায়াত কেন্দ্রিক। এর প্রমাণ ২০১০ সালের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগের বিজয়ের প্রধান কারণ বলেও তাদের ধারণা। তার মতে, সরকার যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ ও সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে তাহলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ইতি টানতে হবে। কারণ এরপর থেকে ঘরে-বাইরে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির আর কিছু থাকবে না।
সম্প্রতি অল্প দিনের ব্যবধানে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় সরকারের অস্থিরতার প্রমাণ মন্তব্য করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চলতি বছর পর্যন্ত সরকার জনগণকে কোনো অর্জন দেখাতে পারেনি। যতটুকু আছে তা হলো কাদের মোল্লার ফাঁসি। এর বাইরে জনসমক্ষে সরকারের কিছু বলার নেই। তাই সর্বশেষে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন জামায়াত নেতাদের রায় নিয়ে সরকার সরব হয়ে উঠেছে।
দলের অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমান অবস্থায় জামায়াত আন্দোলনের চেয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব প্রশমনে ব্যস্ত। এ জন্য গা বাঁচাতে রাজপথের আন্দোলন থেকে তাদের কিছুটা দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, ২০ দলীয় জোটের যে কোন কর্মসূচিতে গা বাঁচিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ বিগত সময়ে জোটের কর্মসূচি পালনে জামায়াত ও শিবির ছাড়া অন্য কোন দল মাঠে ছিল না। এ কারণে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে- যা দল ও জোটের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সূত্র মতে, জামায়াত মনে করে দেশে যদি নির্বাচন হয় আর তাতে ২০ দলীয় জোট যদি সরকারও গঠন করে তাতে জামায়াত খুব একটা লাভবান হবে না। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠনের মতো পরিস্থিতি এখনও জামায়াতের হয়নি। অন্যদিকে নির্বাচন হলে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে তাতে দু’একটি মন্ত্রিত্ব ছাড়া জামায়াতের বেশি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিএনপি সব দিক দিয়ে লাভবান হবে। তাই জামায়াত চায় বর্তমান সময়ে বিএনপি শক্তি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করুক। তবে তাতে জামায়াতের সমর্থন থাকলেও নিজেদের প্রাণ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেবে।
জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতা জানান, চলমান আন্দোলন নিয়ে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগরের দুই নেতা শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরীর দ্বন্দ্ব আন্দোলনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
নগর ছাত্রশিবিরের একটি সূত্র জানায়, এই দুই নেতার দ্বন্দ্বে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের সাজার রায়কে ঘিরে নগরীতে জোরদার আন্দোলন করা যায়নি। তাই ছাত্রশিবিরের একটি অংশ শামসুল ইসলামের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষুব্ধ। ফলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিবির অংশ নেয়নি। এছাড়া, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর আন্দোলনে শিবির কর্মীদের প্রাণহানির ঘটনায়ও শিবির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, দলের কিংবা ইসলামী আন্দোলনের জন্য এমন প্রাণহানি হলে কথা ছিল না। কিন্তু একজন ব্যক্তির জন্য এমন প্রাণহানি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এখন থেকে দ্বন্দ্ব নিরসন না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের কোন কর্মসূচি ছাড়া জামায়াতের ডাকা কর্মসূচিতে শিবির অংশ নেবে না।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতকে প্রথম সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে এর মধ্যে শর্ত ছিল সংস্কারের। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে তাদেরকে বাদ দিয়ে আমির নির্বাচনের শর্ত দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দলের নির্বাহী সদস্য মীর কাসেম আলীকে আমীর হওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ সময় মীর কাসেম সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তরুণ নেতারা কাসেমের পক্ষে সায় দেন। এ নিয়ে রাজধানীর বিজয় নগরে একটি মিটিংও হয়েছিল। এতে দলের অপর নেতা মুজাহিদ ও নিজামীদের সঙ্গে মীর কাসেমের দূরত্ব তৈরি হয়। এই সংস্কার ইস্যুতে সে বছর ছাত্রশিবিরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভাঙন হয়। তখন সেক্রেটারি জেনারেল ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির ৪২ জনের ২৬ জনই পদত্যাগ করেন।
কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিলে পরে সবাই মীর কাসেমের পক্ষ ত্যাগ করেন। এ ইস্যুতে মুজাহিদসহ নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য মীর কাসেমকে দল থেকে বহিষ্কারের উদ্যোগী হন। বিভক্তি এড়াতে সে সময় নিজামী সতর্ক করেন মীর কাসেমকে। এ ঘটনার পর সে বছরের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সরকার থেকে সংস্কার বিষয়ে মীর কাসেমকে চাপ প্রয়োগ করা হলে তিনি আরও সময় চান। এরপর দীর্ঘ চেষ্টায় দলের সিনিয়রদের বিপরীত অবস্থানে তিনি ব্যর্থ হলে দুই বছর পরে তাকেও আটক করা হয়।
এদিকে দলের তরুণ নেতাদের দাবির বিষয়ে জামায়াতের আরেক নেতা ভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। সংস্কারবিরোধী প্রবীণ এই নেতা জানান, যুদ্ধাপরাধের বিচারের অন্যতম লক্ষ্যই হলো জামায়াতকে ধ্বংস করা। ফলে সহিংসতা ও নাশকতার কোনো বিকল্প নেই। তার মতে, বর্তমান সরকারকে এ প্রক্রিয়ায় উৎখাত করা গেলে জামায়াত আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে দ্বিমত পোষণকারীদের স্থান নেই। দলীয় সিদ্ধান্তের সামান্যতম প্রকাশ্য বিরোধিতায় বহিষ্কার অবধারিত। অন্যদিকে উদারপন্থিদের সংস্কার প্রস্তাবকেও তিনি দলের জন্য তাৎপর্যহীন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নতুনরা দল নিষিদ্ধ ও সংস্কারের পক্ষে থাকলেও তাদের বিষয়ে প্রবীণদের সমর্থন নেই। তারপরও যদি তারা জামায়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে কিছু করেন তাহলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
অন্যদিকে বিএনপির জামায়াতবিরোধী একটি গ্রুপ জামায়াতকে বয়কটের ব্যাপারে দলের অভ্যন্তরে চাপ অব্যাহত রেখেছে। দলের চেয়ারপারসনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন বা যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে এবার বিএনপি শেষ হয়ে যাবে।
এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলে খালেদা জিয়া জামায়াতবিরোধী অংশের নেতাদের ভর্ৎসনা করেন। খালেদা মনে করেন, দলের যেকোনো কর্মসূচি সফলে জামায়াতের বিকল্প নেই। কারণ এর আগে জোটের মাসব্যাপী অবরোধ কর্মসূচিসহ বড় কর্মসূচিতে একমাত্র জামায়াত ও ছাত্রশিবির মাঠে ছিল। তাই সরকারবিরোধী যেকোনো আন্দোলনে জামায়াত ছাড়া সফলতা সম্ভব নয় বলেও বৈঠকে খালেদা মন্তব্য করেন। এ জন্য বিএনপির স্বার্থে যেকোনো ভাবে জামায়াতকে সঙ্গে রাখার পক্ষে তিনি তার অবস্থান জানিয়ে দেন।