আইন প্রয়োগের আগে ফুটপাতকে করতে হবে হাঁটার উপযোগী

আইন প্রয়োগের আগে ফুটপাতকে করতে হবে হাঁটার উপযোগী

cityyবেপরোয়া পথচারীদের বিষয়ে কঠিন হওয়ার পূর্বে ঢাকা নগর কর্তৃপক্ষের উচিত ফুটপাতকে হাঁটার উপযোগী করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পাশাপাশি জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসকেও পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা করা উচিত।

ফুটপাতকে হাঁটার উপযোগী করার জন্য সেখানাকার সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চত করতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তা বজায় রাখা, চলাচলের জন্য সচল করে দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, যে সব পথচারীরা শহরের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক, ট্রাফিক কন্ট্রোল কিংবা আবাসিক এলাকার ফুটপাতে বেপরোয়া চলাচল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ফুটপাতকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। রাস্তা পারাপারে পথচারীকে সহযোগিতা করা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব। যদি তারা প্রতিটি জেব্রা ক্রসিং এ নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা রাখেন তাহলে কাউকে কোনো সাজা দেবার প্রয়োজন পড়বে না।”

অপর নগর পরিকল্পনাবিদ ও এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, “যে সমস্ত হকার ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা নগরীর ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। ফুটপাতকে হাঁটার জন্য পরিষ্কার রাখতে হবে। পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ফুটপাতগুলো বন্ধ করে অবৈধভাবে চলছে ব্যবসা।”

গত ২৫ নভেম্বর রাজপথে হাঁটা বেপরোয়া পথচারীদের ধরতে অভিযান চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোবাইল কোর্ট। ফুটওভার ব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহার না করে পথ অতিক্রম করার জন্য ছয় মাসের জেলা কিংবা ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ের সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের ২০১১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার লোকদের মধ্যে ৭২ শতাংশই হচ্ছে পথচারী। প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজধানীর ফুটপাতগুলোর মধ্যে শতকরা ১৮ শতাংশ হচ্ছে চলাচলের উপযোগী। আর বাকিগুলোতে গাড়ি পার্কিং, বিক্রেতা ও হকারদের ব্যবসা, ময়লা-আবর্জনার স্তূপাকার এবং নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার জন্য চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।”

২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে নগরীরর ফুটপাতগুলোকে হকার ও বিক্রেতাদের দখলমুক্ত করে পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ফুটপাত দখলমুক্ত করার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আর এর ফলে ফুটপাতগুলো পথচারী ও বাসে চলাচলকারীদের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, “২০০৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত পরিবহন পরিকল্পনায় ফুটপাতে পথচারীদের অবাধে চলাচলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। নগরীরর ৮০ শতাংশ লোক পায়ে হেঁটে চলাচল করে।”

তিনি বলেন, “ফুটপাতে হাঁটার অধিকার পথচারীদের। আর নগর কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ফুটপাতে চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর তাই পুলিশের উচিত পথচারী নয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।”

প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে সিগন্যালিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। যাতে করে রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে নিরাপদে রাস্তা পারাপার করতে পারেন পথচারীরা। নগরীর ফুটওভার ব্রিজ এবং আন্ডারপাস হকারদের দখলমুক্ত করতে হবে।”

প্রাইভেটকারগুলোর ট্রাফিক নিয়ম না মানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামার সংকেত দেয় তখন প্রাইভেট গাড়িগুলোকে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর অবস্থান নিতে দেখা যায়। আর এটি পথ পারাপারে বিঘ্নতা তৈরি করে। যেসব গাড়ি নিয়ম মানছে না আগে তাদের সাজা দিতে হবে।”

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ঢাকা শহরের ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাতের মধ্যে ১০৮ কিলোমিটারই হকার, বিক্রেতা কিংবা দোকানদের দখলে চলে গেছে। এছাড়া দুই হাজার ৩০০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা সরকারি দলের প্রভাবশালী বিভিন্ন নেতাদের সহযোগিতায় অবৈধ দখলে চলে গেছে।

পথচারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ডব্লিউবিবি পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, “রাজধানীর ৩৭ শতাংশ লোক ফুটপাতে চলাচল করেন। এছাড়া ৯৫ ভাগ লোক নিয়মিত ফুটপাতে চলা-ফেরা করেন।–ইউএনবি।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর