ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে দণ্ড দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেছেন, “ট্রাইব্যুনালের এ রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর চরম আঘাত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি হচ্ছে স্বাধীনভাবে মুক্ত চিন্তার চর্চা করা ও ভিন্নমত সহ্য করে নেয়া। ভিন্ন মত যদি থাকে, থাকলেও তার বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। খুবই দুঃখের বিষয়, এই আদালত আজকের এই রায়ে বাকস্বাধীনতাকে কোনোভাবেই সংরক্ষণ করে না। বরঞ্চ বাক স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করে।”
মঙ্গলবার ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনাল-২ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং মামলা চলাকালীন আদালতে বসে থাকার সাজা দেন। ধার্যকৃত টাকা অনাদায়ে সাত দিনের দণ্ড ঘোষণা করেন।
এ রায়ের পর বার্গম্যানের স্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনে মেয়ে সারা হোসেন বলেন, “যারা এখানে সংবাদকর্মী আছেন তাদের প্রথমেই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত, সাংবাদিকরা কি কিছু বলতে পারবে না, কিছু করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “অবমাননার আইন দিয়ে এভাবে রুদ্ধ করে, আপিলের সুযোগ থাকবে না, যেটা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত না, এসব কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে ভালো চোখে দেখায় না। বিদেশি নাগরিকদের কাছে আমরা আমাদের অধিকার রাখতে পারছি কি না। সবকিছু যে কোর্টের আইন দিয়ে বেঁধে দেয়া সাংবিধানিক কিনা, অবমাননা হবে এবং এখানে আপিলের সুযোগ থাকবে না, প্রশ্ন তোলার জায়গা থাকবে না, সেটা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে অধিকারটুকু আদায় করতে পারবে কিনা তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ডেভিড বার্গম্যানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়ে সারা হোসেন বলেন, “এটা ট্রাইব্যুনালে এখতিয়ার না।”
তিনি বলেন, “কারো নাগরিকত্ব দেখা না দেখা এটি তাদের কাজ না। তারা যদি হুমকি দিতে চায়, বাংলাদেশি একজন নাগরিকের স্বামী, তার অধিকার থাকবে না এদেশে থাকার, এদেশে কথা বলার, তাহলে আমি এ ব্যাপারে চরম, চরম, চরম আপত্তি জানাচ্ছি।”
সারা বলেন, “মনে হচ্ছে এদেশে দুই ধরনের নাগরিক আছে, যারা অন্য দেশের নাগরিককে বিয়ে করতে পারবে, ঢাল তলোয়ার পরে আছে।’
তিনি বলেন, “উচ্চতর পর্যায়ে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন, যা ইচ্ছা তাই বলতে পারবেন, তাতে কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু যারা সরকারের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হবে।”
এই আইনজীবী বলেন, “এ সরকারের কোনো কাজ নিয়ে সমালোচনা করলেই সেটা উনি (ডেভিড বার্গম্যান) , আমি বা অন্য যে কেউ হোক… আপনারা সবাই ভালো বুঝছেন তার ওপরে কেন আক্রমণ আসছে।”
তিনি বলেন, “কোর্ট একটা রায় দিয়েছে, কিন্তু কোর্ট এ রায় কিসের ভিত্তিতে দিয়েছেন। প্রসিকউশনের কোনো আবেদনের ভিত্তিতে দেয়নি। তৃতীয় একটি পক্ষের আবেদনে এ রায় দিয়েছে। ওই তৃতীয় পক্ষ কারা? কারা তাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে? কেন তারা এখানে এসছেন? আপনারা কেন এ প্রশ্নগুলো করছেন না? ”
এসময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কারা তাদেরকে পাঠিয়েছে বলে আপনি মনে করেন? এর জবাবে সারা বলেন, “আমার মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো একটা কারণ আছে। আপনারা খোঁজ করেন, আপনারা সংবাদকর্মী, আপনাদের তদন্ত করে বের করা উচিত কেন মনে করা হচ্ছে যে, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো একটি প্রশ্ন তোলা যাবে না।”
“মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস আছে। সেটা নিয়ে কেন কথা বলা যাবে না?” বলেন সারা।
এক সাংবাদিকের প্রশ্ন করেন, আপনি কি মনে করেন চর্চার মানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা? জবাবে সারা হোসেন বলেন, “৩০ লাখ, তিন লাখ বলা বা ইতিহাস বিকৃত করার কথা এখানে আসছে না। ৩০ লাখ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এমন অনেককে হাতের কাছে পাওয়া যায়নি। হাতের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেছে সেজন্যই কি রায় দেয়া হয়েছে? ”