বিনা খরচায় ৮০ দিনে বিশ্ব ভ্রমণ

বিনা খরচায় ৮০ দিনে বিশ্ব ভ্রমণ

travelarমাত্র ৮০ দিনে বিশ্ব ভ্রমণ করে এসেছেন বিহলম্যান এবং মুয়ানমের ইলম্যাজ নামের দুই পর্যটক। এর জন্য পকেট থেকে এক পয়সাও খরচ করতে হয় নি তাদের। সংবাদটা অবাক হওয়ার মতো। অনেকটা জুলস ভার্নের কাল্পনিক চরিত্র ফিলিয়াস ফগের মতোই। ফরাসি এ ঔপন্যাসিক নিজের তৈরি চরিত্রকে ৮০ দিনে বিশ্ব ভ্রমণ করিয়ে এনেছেন। কিন্তু দুই বন্ধু মিলান বিহলম্যান এবং মুয়াম্মের ইলমাজ বাস্তবেই ঘুরে এলেন বিশ্ব। একটি মাত্র দুঃসাহসিক অভিযানে তারা অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরসহ ১২ হাজার পাঁচ শ মাইল ভ্রমণ করেছেন। গড় পরতায় প্রতিদিনের হিসাব ১৫৫ মাইল। মিলান জার্মানির বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ি এবং পেশাদার বাজিকরও। বর্তমানে বার্লিন স্কুল অব ইকোনোমি এন্ড ল তে ব্যবসা প্রশাসনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছেন। ৩৯ বছর বয়সি মুয়াম্মের একজন ফরাসি ফটোগ্রাফার এবং প্রযোজক। তিনি নেশায় পর্যটকও। এ দুই বন্ধুর প্রথম দেখা হয় ২০১০ সালে বার্লিনের একটি আয়োজনে। সেখানে তারা একসাথে তিন দিন ছিলেন। এবং মাত্র তিন দিনের পরিচয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বিশ্ব ভ্রমণের। সেই থেকেই শুরু হলো ঝটিকা অভিযান। অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করে ৮০ দিন পর এসে থামলেন । এর মধ্যে প্রতিবন্ধকের মুখোমুখিও হয়েছেন। তবে সবাইকে বোঝাতে পেরেছেন, তাদের উদ্দেশ্য। তারা বুঝিয়েছেন ট্রাভেল কোম্পানীগুলোকে। বিভিন্ন দেশে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে তারা ট্রেনের টিকেট এবং বিমান ভাড়ার ব্যবস্থাও করেছেন। এর জন্য নিজেদের পকেট থেকে কোনো পয়সা খরচ হয়নি। তবে ভারতের কলকাতায় এসে তারা সাময়িক আটকে থাকেন। অবশ্য সেখানে স্থানীয় অনেকেই তাদের ফেসবুক পেজে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অনেক লোক মিলে থাইল্যান্ডে যাওয়ার খরচ বহন করতে চেয়েছেন। তবে স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে তাদের ব্যাপারে জেনে এগিয়ে আসেন কলকাতার এক পোল্ট্রি খাবারের ব্যবসায়ি। সারাওজি নামের এ ব্যবসায়ি দুই পর্যটক বন্ধুকে রাতের খাবারের জন্য নিজের বাড়িতে দাওয়াত করেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্রে এদের ব্যপারে পড়ার পরই আমি উৎসাহি হয়ে উঠি। তাই আমি এদেরকে দাওয়াত করে ফেসবুক পেজে মেসেজ পাঠাই। তবে নিজেই শঙ্কায় ছিলাম, এরা সম্ভবত এখন অনলাইনে নেই। অথবা মেসেজটা আদৌ এদের কাছে পৌঁছবে না। কিন্তু মেসেজ পাঠানোর মাত্র দুই ঘন্টা পরই দুই বন্ধু এসে হাজির হন সারাওজির অফিসে। সারাওজি বলেন, ওদেরকে নিয়ে আমার আলিপুরের বাড়িতে বসি। সেখানে আমার স্ত্রী দিপালি, মেয়ে নন্দিনি এবং ভ’মিও মিলান ও মুয়াম্মারের সাথে দেখা করে। রাতের খাবারের জন্য ডাল, আলু ও বাধাকপি দিয়ে সব্জি তৈরি করি। তিনি বলেন, ওরা প্রথমে জানতে চেয়েছিলো কেন আমি তাদের সহযোগিতা করতে চাইছি। আমি জবাবে বললাম ওরা যেন ভালোভাবে দুঃসাহসিক যাত্রাটা শেষ করতে। কথা শুনে ওরা হাসলো। সারাওজির মতো বিশ্বজুড়ে এমন অনেক লোক ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় অভিযানটি শেষ করতে পেরেছেন দুই বন্ধু। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোতে ঘুরা ছিলো এদের জন্য সবচে সহজ। তবে ইরানে প্রবেশের সময় কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। মিলানের বাড়ি জার্মানিতে হওয়ায় ইরান সরকার তাদের অন এরাইভেল ভিসা দিতে সমস্যা করে। তাই ভিসার আবেদন করে দশ দিনের মতো এদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো তুরস্ক ও ইরান সীমান্তে। মোট আশি দিনের ভ্রমণের এই ১০টা দিন ছিলো তাদের জন্য অপচয়। এ দুই বন্ধুর ফেসবুক পেজের শিরোনাম ‘অপটিমিস্টিক ট্রাভেলার’।

আন্তর্জাতিক