আগামী নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন : প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন যেসব প্রবাসী দেশে অবস্থান করবেন এবং এরইমধ্যে ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’

বুধবার জাতীয় সংসদের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে শফিকুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার জন্য ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ৮ ধারা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধন করার পর যা দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে- কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে, তিনি সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকায় বা ভোটার এলাকায় বসবাস করেছিলেন অথবা তার নিজ বা পৈত্রিক বসতবাড়ি যে স্থানে অবস্থিত ছিল বা আছে, তিনি সে এলাকার অধিবাসী বলে গণ্য হবেন।’

তিনি আরো জানান, প্রবাসীরা দেশে এসে ভোটার তালিকা বিধিমালা ফরম-১১ ও ফরম-২ পূরণ করে ভোটার হওয়ার জন্য উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস অথবা জেলা নির্বাচন অফিস অথবা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আবেদন করতে পারেন। প্রবাসীরা যদি দেশে এসে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তারা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ আবেদন করলে তাদের নাম যথারীতি ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। যারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন না, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ পেয়েছেন তারাও ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন। কিন্তু এ জন্য তাদের বাংলাদেশে ঠিকানা থাকতে হবে।

এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়নের পর যখন দর পতন হয় তখন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে সনাক্ত করা অপরাধের সবগুলোর অনুসন্ধান করে পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কয়েকটি মামলার বিবেচনায় আছে। তাছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী আরো ১৪টি বিষয়ের ওপর অধিকতর তদন্ত চলছে।

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সরকার সময় সময় নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পদেক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার আশা করছে, এসব পদক্ষেপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। এছাড়া শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবাদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজারকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হয় তাহলে সরকার তা জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করবে।’

আজিজুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের সকল ধর্মাবলম্বীর জন্য একটি সুখি-সমৃদ্ধ ধর্ম নিরপক্ষে বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় সারাবিশ্বে যে পরিচিতি লাভ করেছিল সে দুর্নাম ঘোঁচাতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সক্ষম হয়েছে।’

দেশের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনারোধ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক সম্পর্কিত একেএম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, এরইমধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ২১৯টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানকে ব্ল্যাক স্পট নামে চি‎হ্নিত করা হয়েছে। এসব স্পটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপনের উদ্যোগ আপাতত নেই। তবে দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও জাতীয় মহাসড়কে বিপরীতমুখী দুর্ঘটনারোধ পর্যায়ক্রমে রোড ডিভাইডারসহ চার লেইনে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

তিনি জানান, সড়ক বাঁকের বিপরীতমুখী দুর্ঘটনারোধে সড়ক বাঁকগুলো প্রশস্ত করে রোড ডিভাইডার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ব্ল্যাক স্পটে দুর্ঘটনা রোধকল্পে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান আছে, যার বাস্তবায়ন শিগগিরই শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, চলতি অর্থবছরে ১২৫টি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে ৩০ হাজার পেশাদার গাড়ি চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গত অর্থবছরে ৮৮টি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্য ১৮ হাজার পেশাজীবী গাড়ি চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ৬৫টি কোর্সের মাধ্যমে আট হাজার ২৫০ জন পেশাজীবী গাড়িচালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

নাসরিন জাহান রতনার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বৈদেশিক রেমিট্যান্স ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সরকার বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে যেখানে বৈদেশিক রেমিট্যান্স এর পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৬৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখাসে গত অর্থবছরে তা ১২ বিলিয়ম মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ও প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকার পথশিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন অব চিলড্রেন (ইপিসি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, ঝরেপড়া ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচি চালু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরের নির্বাচিত ৫শ’ শিশু এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ২৩৬ পথশিশুর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। শিগগিরই ২০টি জেলায় প্রতি মাসে ১০ হাজার পথশিশুকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম চালু করা হবে।

সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর দারিদ্র্য বিমোচন, শিল্পায়ন, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূরীকরণে দেশে বিদেশি ও দেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, আশ্রায়ন প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৮ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর আগে ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তুভিটাহীন ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। ৫০ হাজার ভূমিহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ন-২ (জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০১৪) নামে একটি প্রকল্পের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সরকারের আমলে ৯৩ হাজার ৩৪৫টি ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ৪২ হাজার ৮৪০ একর খাসজমি বিতরণ করা হয়েছে।

এর আগে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে চলতি অধিবেশনের ১৯তম কার্যদিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর