যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধদের বৈধ ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার বাংলাদেশি দিন গুণছেন। তারা আশা করছেন, প্রেসিডেন্টের এই সম্ভাব্য আদেশের ফলে বৈধতা লাভের জন্য তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর অভিবাসন ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের মুল্লুকের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলেও আসলে কবে নাগাদ এ বিষয়ে ওবামা সিদ্ধান্ত নেবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ওবামা এ ধরনের আদেশে স্বাক্ষর করলে চূড়ান্ত সমাধানের জন্য সেটা শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ১১ মিলিয়ন অবৈধ মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা খুব বেশি না হলেও সেটা একেবারে কম নয়। তবে সঠিক সংখ্যা জানা নেই কারো।
তবুও যারা অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারা চাচ্ছেন এর একটা সমাধান হোক। আর তাই প্রেসিডেন্ট ওবামার ঘোষণা অনুযায়ী অবৈধদের বৈধতাদানের বিষয়ে ইতিবাচক যেকোনো সিদ্ধান্ত হলেই অনান্য দেশের নাগরিকদের মতো অনেক বাংলাদেশিও উপকৃত হবেন।
বাংলাদেশের প্রাক্তন বিচারক আইন পেশার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি এ্যাট ল’ অশোক কে কর্মকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওবামা যদি সত্যি এটাতে স্বাক্ষর করেন তাহলে অনেকেই উপকৃত হবেন, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এর আওতায় বহুসংখ্যক বাংলাদেশি পড়বেন না। কারণ অবৈধ জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে বাংলাদেশি কম। কিন্তু তারপরও যারা অনেকদিন ধরে আছেন, কিন্তু কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হননি, তারা এই সুবিধা পেতে পারেন। তবে কবে নাগাদ সেই সুবিধা পাবেন সেটার জন্যও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এই বৈধতা দেয়া হবে ধাপে ধাপে। পুরো বিষয়টি এখনো অস্বচ্ছ বলেও তিনি জানান।
বগুড়ার দিলরুবা চৌধুরী যিনি গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে তিনি দুই কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। তার আশা এতোদিন বৈধতা না পেলেও এবার তারা বৈধতা পাবেন।
নেত্রকোনার রাজিব আরমান ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবেই বসবাস করছেন ফ্লোরিডায়। তার আশা এবার তিনি বৈধতা পাবেন। কবে স্বাক্ষর করবেন ওবামা সেটা জানতেই তার আগ্রহ বেশি।
তাদের মতোই জিল্লুর রহমান, ইমাম মজুমদার, রাফিউলসহ আরো অনেকেরই একই অপেক্ষা। কবে আসবে সেই দিন যেদিন ওবামা স্বাক্ষর করবেন বহু প্রতীক্ষিত ওই নির্বাহী আদেশে।
হোয়াইট হাউজের স্পোকসম্যান জোস আর্নেস্ট স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, এখনো নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্ট কোনো সময় নির্ধারণ করেননি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট কোনো চূড়ান্ত ফাইল পেয়েছেন কিনা তাও জানাতে পারেননি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন থেকে এ বছরের শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট তার নির্বাহী আদেশ প্রয়োগ করতে পারেন।
প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য এই স্বাক্ষর নিয়ে দ্বিমুখী চাপে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সিনেটের বর্তমান ডেমোক্রেট লিডার হ্যারি রেইড মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে দেরি না করে একটা বড় কিছু (অভিবাসন সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ) করার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ জানান।
অন্যদিকে হাউজ স্পিকার জন বোয়েনার এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ওবামা আগুন নিয়ে খেলছেন। অভিবাসী নিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা মেনে নেয়া হবে। ওবামা যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাহী আদেশ জারি করেন, সে ক্ষেত্রে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৮৬ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এবং ১৯৮৯ সালে জর্জ ডাব্লিউ বুশের শাসনামলে অভিবাসন সংক্রান্ত দুটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। যার আওতায় অনেক অভিবাসী উপকৃত হয়। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার দুই মেয়াদের শাসনকালে এ পর্যন্ত ১৯৩টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে প্রথম মেয়াদে ১৪৭ এবং বর্তমান মেয়াদে ৪৬টি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
প্রেসিডেন্ট হ্যানরি হ্যারিসন তার শাসনামলে কোনো নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেননি। প্রেসিডেন্ট জন এ্যাডামস, জেমস ম্যাডিসন ও জেমস মনরো তাদের শাসনামলে মাত্র ১টি করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৫২টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।
সিনেট ও হাউজে বর্তমান মেয়াদের অবসান হবে এ বছরের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ। জানুয়ারিতে নবনির্বাচিত সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানরা দায়িত্ব বুঝে নেবেন। আর তাই হাউজের উচ্চকক্ষ এবং নিম্ন কক্ষে রিপাবলিকানদের একচ্ছত্র আধিপত্য পাওয়ার আগেই ওবামা চাচ্ছেন অভিবাসন বিষয়ে তার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে।
এদিকে সম্ভাব্য এই আদেশের সমর্থক, সমালোচক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক বোদ্ধারা বিস্তারিত দেখার অপেক্ষায় আছেন। ওবামার স্বাক্ষর হলে ধাপে ধাপে প্রায় সাড়ে ৫ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী এই সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে যারা শিশু বয়সে বাবা-মার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে এসে গত ১০ বা ৫ বছর ধরে বসবাস করছে তাদের বাবা-মা এবং সন্তানরা এই সুবিধা পাবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২৬ নভেম্বর থ্যাঙ্কস গিভিং ডে এবং ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে এর আগে বা মাঝামাঝি যে কোনো সময়ে প্রেসিডেন্ট অবৈধ অভিবাসীদের জীবনের স্বপ্ন পূরণের সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে পারেন।