মেয়েদের হার্ট সুরক্ষায় করণীয়

মেয়েদের হার্ট সুরক্ষায় করণীয়

heartহৃদপিণ্ডের সমস্যা শুধু পুরুষদেরই হয়ে থাকে তা নয়, একটি পর্যাপ্ত বয়সে নারীদেরও হৃদপিণ্ডের সমস্যা হয়ে থাকে। আমরা বেশির ভাগ সময়েই পুরুষ মানুষের হৃদপিণ্ডের সমস্যা সম্পর্কে শুনে থাকি কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের শরীরেও দেখা দিতে পারে নানা রকমের সমস্যা এবং নানাবিধ শারীরিক সমস্যার মধ্যে হৃদপিণ্ডের সমস্যাটিও এখন নারীদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দেখা দিয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নিই নারীদের হৃদপিণ্ডের অসুখ সম্পর্কিত কিছু তথ্য।

হার্ট অ্যাটাক আসলে কী?
একেবারে হঠাৎই করেই আক্রান্ত হতে পারে মানুষের হার্ট অর্থাৎ হৃদপিণ্ড। চিরকালের জন্য বিকল হয়ে যেতে পারে পেশিবহুল এই পাম্পটি। হৃদযন্ত্রের পেশিতে যে সব ধমনি রক্ত সরবরাহ করে তাদের বলে করোনারি আর্টারি। এই করোনারি আর্টারি কোনো কারনে ব্লক হলে হৃদযন্ত্রের পেশির যে অংশটিতে রক্ত সরবরাহ হচ্ছে সেই পেশিটি নষ্ট হয়ে যায়। আর্টারি ব্লক হওয়ার জন্য হৃদযন্ত্রের পেশির কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়াকেই হার্ট অ্যাটাক বলে। নানা কারণে হৃদযন্ত্রের করোনারি আর্টারিতে চর্বি জমা হয়ে আর্টারিতে আংশিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তার সঙ্গে রক্ত জমাট বাধলে কিংবা স্পেজম হলে আর্টারি ব্লক সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই ব্লকের সময়সীমা যদি ২০ থেকে ৩০ মিনিট থাকে তা হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। তবে ব্লক যদি ওই সময়ের মধ্যে খুলে যায় তা হলে রোগী তখনকার মতন বেঁচে যান।

কোন বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয়?
নারীদের হৃদপিণ্ডের সমস্যা হয়ে থাকে একটু বেশি বয়সে। মেনোপজের (পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া) পর নারীরা এই রোগে আক্রান্ত হন। কারণ এই সময় নারীদের শরীরে প্রজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা অনেক কমে যায়। তখন পুরুষ ও নারীদের হার্ট অ্যাটাকের অনুপাত একই হয়ে যায়।

হার্ট অ্যাটাক রুখতে যা করণীয়
পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই হৃদপিণ্ডের রোগের প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টোরল, রোগের বংশগত ধারা, বয়স এবং ধূমপান। এক মুহূর্ত ভেবে দেখুন আপনার লাইফস্টাইল, বংশের ধারা, সাধারন স্বাস্থ্য কেমন। প্রথম থেকেই সুস্থ জীবনযাপনের তালিকা মেনে চললে হৃদপিণ্ডের সমস্যা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। সঠিক খাওয়া-দাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, নির্দিষ্ট ঘুমাতে যাওয়া এমন কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই ‘হ্যাপি হার্ট’ এর অধিকারী হতে পারবেন।

ধূমপান করবেন না
যদিও আমাদের দেশের মহিলাদের ধূমপানে আসক্ত হতে কম দেখা যায় তারপরও জেনে রাখা ভালো যে হার্ট অ্যাটাক এর অন্যতম কারন হল ধূমপান। ৫০ বছরের নিচে যতো মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক হয় তার অর্ধেকেরও বেশির জন্যে দায়ী ধূমপান।

আপনি যদি ধূমপান বন্ধ করে দেন তাহলে ২ বছরের মধ্যেই আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা অনেক কমে যায়। এমনকি পুরুষ ধূমপায়ীদেরও হৃদপিণ্ডের এবং ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
উচ্চরক্ত চাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ তা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। ওজন কমান প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সুষম খাবার খান, লবন কম খান। এসব উচ্চরক্ত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এসব করার পরেও যদি আপনার উচ্চরক্ত চাপ স্বাভাবিক না থাকে তাহলে তখন দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন আপনার হার্ট এবং ধমনীর উপর চাপ ফেলে। ব্যায়াম এবং লো ফ্যাট ডায়েট আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত ওজনের ফলে নানা ধরনের জটিল অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, এবং হৃদপিণ্ডের সমস্যা। আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ৪৫ বছরের পরে পুরুষদের থেকে নারীরাই বেশি হৃদপিণ্ডের সমস্যা ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।

বুকে ব্যথা হলে সতর্ক হন
বুক, কাঁধ, ঘাড়, চোয়ালে যন্ত্রণা হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হলে, বমি বমি ভাব হলে একটুও দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

তাছাড়া যেই কাজগুলো আপনার অবশ্যই করা উচিত
• প্রতিদিন ব্যায়াম করুন
• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন
• কোলেস্টেরল এবং ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল চেক করান
• ধূমপান থেকে দূরে থাকুন
• স্ট্রেস কমান
• আপানর পরিবারের ইতিহাস জানুন, আগে কারো হৃদপিণ্ডের অসুস্থতা ছিল কি না।
• হার্ট ভালো রাখতে খাবারে বেশি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনুন।

অন্যান্য