‘উই হ্যাভ নো ল্যাংগুয়েজ টু ক্রিটিসাইজ দিজ রিমার্কস’

‘উই হ্যাভ নো ল্যাংগুয়েজ টু ক্রিটিসাইজ দিজ রিমার্কস’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের ওপর আদেশের সময় আদালত বলেন, ‘আমার লক্ষ করছি দুই সাংবাদিকের হত্যার ঘটনা তদন্তে সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ তদন্তে কোন ধরণের ভুল অথবা অবহেলা আমাদের চোখে পড়েনি।’

একাধিক তদন্ত সংস্থা এ ঘটনার পুরো সত্য বের করে আনার জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘সরকার প্রধান ঘটনাটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে লক্ষ করছি, কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ ধরণের মন্তব্য করেছেন।’

আদালত আরও বলেন, ‘সোমবার লালমনিরহাটে বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেছেন যে, সরকারই খুন করেছে। উই হ্যাভ নো ল্যাংগুয়েজ টু ক্রিটিসাইজ দিজ রিমার্কস। তার এ বক্তব্য তদন্তকে প্রভাবিত করতে বাধ্য।’

আদালত বলেন, `যুক্তরাজ্যে বা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হলে এ ধরণের বক্তব্যের জন্য তাকে কারাগারে পাঠানে হতো। তার বক্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, আদালত অবমাননারও শামিল।`

‘আমরা সকলে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দেখতে চাই। দুটি সংবাদপত্র রিপোর্ট করেছে (জজমিয়া খোঁজা হচ্ছে, জজ মিয়া প্রস্তুত)। এসব নিউজও তদন্তকে প্রভাবিত করে। তদন্তকে প্রভাবিত করে এমন কিছু করা বা বলা ঠিক হবে না। যারা মরে গেছে তাদের আত্মার প্রতি তার (খালেদা) কোনও শ্রদ্ধা নেই। এবং দুই সাংবাদিকের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা নেই“– বলেন আদালত।

তদন্তকে প্রভাবিত করে এমন কোনও সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য আদালত সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহবান জানান।

আদালতে আইজীবীদের বক্তব্য:

শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে। কিন্তু কিছু সংবাদপত্র জজ মিয়া নাটকের কথা বলছে। এখন যদি এ বিষয়ে আদালত আদেশ না দেন, তাহলে সত্যিকার আসামি গ্রেপ্তার হলে তাকেও জজ মিয়া হিসেবেই মানুষ জানবে। তাই এ বিষয়ে একটি আদেশ দরকার। মিডিয়ায় বিভিন্ন কথা আসার কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। এ ধরণের যেন সংবাদ প্রকাশিত না হয় এ জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তখন আদালত বলেন, এটা নিয়ে এখন রাজনীতি চলছে। আর আমরা সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি খুঁজি। এটা অপ্রত্যাশিত। আর যদি রাজনীতি হয় তাহলে তদন্তে বিঘ্নে ঘটবে।

এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আদালত প্রশ্ন করে বলেন, আপনি তো বিদেশে ছিলেন। এটা নিয়ে রাজনীতি হওয়া কী ঠিক? দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেছেন ওই হত্যাকাণ্ডে সরকার জড়িত। এ ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেওয়া ঠিক কিনা?

এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পৃথিবীর সকল দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আইনজীবী হিসেবে বলবো বিচারাধীন বিষয়ে কোন পক্ষেরই মন্তব্য করা ঠিক নয়।

আদালত বলেন, তার (খালেদা জিয়া) এ বক্তব্য তদন্তকে ব্যাহত করবে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি একটা রায় দিয়ে দিয়েছেন।

মাহবুব উদ্দিন বলেন, এসব বিষয় নিয়ে কোন মন্ত্রী বা নেতার কমেন্ট করা ঠিক না। আর এ ধরণের বক্তব্য দেওয়া আমাদের দেশে কালচার হয়ে গেছে।

এসময় আদালত বলেন, ইংল্যান্ড হলে তার এ বক্তব্যের জন্য তাকে জেলে দিতো। আর এ ধরণের কালচার বাদ দিতে হবে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিদেশে এ ঘটনা ঘটলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করতেন।

তিনি আরো বলেন, লালমনিরহাটে বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে আমি ছিলাম। তিনি যে কথা বলেছেন সেটি হচ্ছে গত কয়েকদিনের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের একটি সারমর্ম।

এরপর আদালত অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনকে এ বিষয়ে শুনানি করতে বলেন।

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সঠিক না।

এ সময় আদালত বলেন, এ ধরণের বক্তব্যের পর আদালত নিরপেক্ষ বিচার করতে পারবে কিনা। এ প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, শুধু আদালত নয়। তদন্তও প্রভাবিত হয়। যা অনাকাঙ্ক্ষিত। যদি মামলা না হতো কিংবা তদন্ত না হতো তাহলে বক্তব্য দেওয়া যেতো। কিন্তু এখানে তদন্ত হচ্ছে, মামলা হয়েছে। এখানে সবাইর সহযোগিতা করা উচিত।

এরপর আদালত অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়নকে বলেন, ডেডবডি নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক কী না?

জবাবে ইউসুফ হোসেন বলেন, কারো মন্তব্য করা কিংবা রাজনীতি করা ঠিক না। মুক্ত মনে বিষয়টির তদন্ত করতে দেওয়া উচিত।

আদালত বলেন, সরকার এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে এ ধরণের বক্তব্য দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

এরপর আদালত শ.ম রেজাউল করিমকে এ বিষয়ে শুনানি করতে বলেন।

রেজাউল করিম বলেন, সরকার এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে অনেক বেশি তাগিদ দিয়েছে। যা কখনো হয়নি আগে। হুমায়ুন কবির বালু, শামসুর রহমান ও মানিক সাহা সহ অনেক সাংবাদিক খুন হয়েছেন। তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।

তিনি বলেন, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে মন্তব্য করতে হবে। আর তদন্ত দ্রুত করলে প্রকৃত বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা (আশংকা) থাকে। এ হত্যাকা- তদন্তে ছয়টি টিম কাজ করছে। এখানে সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই।

তারপর আদালতের আহবানে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।

তিনি বলেন, যদি ওনার (খালেদা জিয়া) কাছে এ ধরণের কোন তথ্য থাকে তাহলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারেন। তবে এ ধরণের বক্তব্য তিনি তদন্তের পরে করতে পারতেন।

এসময় আদালত বলেন, এদেশে এসব কথা বলা অন্যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। যদি এ অবস্থায় মন্তব্য করলে বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদবে।

এরপর আদালত দৈনিক ইত্তেফাকের আইন, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সম্পাদক সালেহ উদ্দিনের বক্তব্য শুনতে চান।

সালেহ উদিন  বলেন, আমরা এ দেশের নাগরিকরা অপরাজনীতির শিকার। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কারোরই বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। আমরা চাই আদালত এমন নির্দেশনা দিক যাতে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে।

রাজনীতি