‘অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক ইউসিবি আজকের অবস্থানে এসেছে। শুধু মুনাফা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, সমাজের অনেক ভালো কাজে আমরা অংশ নিচ্ছি। জনগণের ব্যাংক হিসেবে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। দিন দিন ইউসিবি’র সুনাম বাড়ছে, দায়িত্ব বাড়ছে, গ্রাহকের প্রত্যাশা বাড়ছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের হালিশহরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেডের ১১৭তম শাখার উদ্বোধনকালে ব্যাংকের পরিচালক সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ কথা বলেন।
ইউসিবি’র জন্ম চট্টগ্রামে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিউইয়র্ক, করাচি, সিঙ্গাপুর, চীনের পোর্টসিটির মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উন্নয়ন হয়নি, এটা যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের ব্যর্থতা। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম যতটা গুরুত্ব পেয়েছিল এখন ততটা কদর নেই। অদম্য চট্টগ্রামকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আশাকরি চট্টগ্রাম হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
বেসরকারি ব্যাংকের নানা সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বৃদ্ধিতে বেসরকারি ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অর্থনীতিতে বিপ্লব এনেছে বেসরকারি ব্যাংক।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম শাহজাহান ভূঁইয়া, পরিচালক হাজি এমএ কালাম, বজল আহমেদ, মিসেস সেতারা বেগম, নুরুদ্দিন জাভেদ, সাব্বির আহমেদ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আলম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহেদ জালাল চৌধুরী ও মির্জা মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য’ গানের উদ্ধৃতি দিয়ে এম শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘ইউসিবি’র উদ্দেশ্য দেশটিকে উন্নত করা, জনসেবা করা, দেশের সেবা করা। দেশের উন্নয়ন না হলে ব্যক্তির উন্নতি হবে না। আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে চাই। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। মর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত করতে চাই।’
পর্যায়ক্রমে সিলেট, মুন্সীগঞ্জ ও ধানমণ্ডিতে ইউসিবি’র শাখা খোলা হচ্ছে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের কাজ গ্রাহকের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করা। ইউসিবি জনগণের ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। পেশাগত যোগ্যতা দিয়ে আমরা গ্রাহকের সেবা করি। মানুষের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইউসিবি কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে অন্য ব্যাংক অনুপ্রাণিত হচ্ছে।’
ইউসিবি’র কাছে গ্রাহকের ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি আমানত রয়েছে দাবি করে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা মো. রফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। ১৯৮৩ সালে এ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশের ব্যাংকিং খাতে অবদান রাখার প্রত্যয়ে। চট্টগ্রামে এ ব্যাংকের শাখা আছে ২৯টি। ২০১২ সালের মধ্যে আরও ১১টি শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। শাখা বৃদ্ধি ব্যাংকের কৃতিত্বের স্বাক্ষর।’
তিনি বলেন, ইউসিবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাবলম্বী ও অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বনির্ভর করার স্বপ্ন নিয়ে। করপোরেট লোনের পাশাপাশি অমিত সম্ভাবনাময়ী ব্যবসায়ীদের সাফল্য এনে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যাদের মেধা আছে, অর্থ নেই তাদের জন্য অটো লোন, হাউস বিল্ডিং লোন, ডক্টরস লোন, ম্যারেজ লোন, শিক্ষা ঋণ, এনি পারপাস লোনের ব্যবস্থা রয়েছে। সমাজের বিভিন্ন খাত এমনকি একজন কৃষক, নারী উদ্যোক্তাদেরও উৎসাহিত করছি আমরা।’
তিনি বলেন, ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইউসিবি’র সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর যুগের প্রয়োজনে ইউসিবি’র সব শাখা অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। ক্রেডিট ও ডেবিট ডুয়েল কার্ড রয়েছে, যা বিদেশেও সমান জনপ্রিয়।
হালিশহরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন উল্লেখ করে রফিকুর রহমান বলেন, ‘আজ উদ্বোধনী দিনেই আমরা ২০ কোটি টাকা আমানত পেয়েছি গ্রাহকদের কাছ থেকে।’
সাম্প্রতিক তারল্য সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা অস্বীকার করি না, কিছু কিছু ব্যাংকে এ সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের নেই। উল্টো আমরা বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংককে ঋণ দিচ্ছি তাদের তারল্য সঙ্কট কাটানোর জন্য।’
মিসেস সেতারা বেগম বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে ইউসিবি’র অবদান অনস্বীকার্য। ২০১১ সালে আমরা ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছি। কৃতী ব্যাংকার হিসেবে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বর্ণপদক পেয়েছেন।’
হাজি এমএ কালাম বলেন, ‘২৯ বছর আগে আমরা নগণ্য আকারে দেশ জাতির প্রয়োজন মনে করে ব্যাংক খাতে এসেছিলাম। আশাকরি নতুন প্রজন্মের পরিচালনায় এ ব্যাংক দেশ ও দেশের আর্থিক চাবিকাঠিতে পরিণত হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন ইউসিবি’র হালিশহর শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ।
আলোচনা পর্ব শেষে অতিথিরা ফিতা কেটে ইউসিবি’র হালিশহর শাখার উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে ইউসিবি’র শুভানুধ্যায়ী, গ্রাহক, স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শাখা ব্যবস্থাপক, কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।