বিডিআর বিদ্রোহের দিন বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে খালেদা জিয়া পাকিস্তান হাই কমিশনারের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
মঙ্গলবার বিকেলে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
দাবির পক্ষে সাফাই গেয়ে হানিফ বলেন, ‘কারণ এদিন তিনি (খালেদা) ঘটনার আধাঘণ্টা আগে ক্যান্টনমেন্টের সুরক্ষিত বাসা ছেড়ে কেন সেখানে (পাকিস্তান হাই কমিশন) গেলেন জাতি তার জবাব চায়।’
হানিফ প্রশ্ন তোলেন, ‘তার এই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে কি প্রমাণ হয় না যে তিনি এ ঘটনা আগে থেকেই জানতেন।’
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন’ দাবি করে হানিফ বলেন, ‘সাগর-রুনি নাকি সরকারের দুর্নীতির কথা জানতেন। তার (খালেদা) কাছে যদি এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোন তথ্য থাকে তা দিয়ে তিনি পুলিশকে সাহায্য করছেন না কেন?’
তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে সরকারের হাত আছে বলেও তিনি (খালেদা) অভিযোগ করেছেন। যদি হাই হয় তাহলে তার শাসনামলে ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিলো। তাহলে সেই হত্যাকাণ্ডেও তার সরকারের হাত ছিলো।’
হানিফ বলেন, ‘প্রকৃতঅর্থে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের আড়াল করতেই খালেদা জিয়া এ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন।’
হানিফ বলেন, ‘পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন, নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছেন।’
তিনি বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি সমগ্র জাতি যখন উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলো, তখন বিরোধী দলের নেত্রী সরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের ছাড়াই কোথায় চলে গিয়েছিলেন? বিডিআর বিদ্রোহের আগে তার বাসা ছেড়ে চলে যাওয়া কি এটাই প্রমাণ করে না যে তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানতেন!’
হানিফ বলেন, ‘ঘটনার পর সংসদে আলোচনাকালে বিএনপির এমপি, যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী শহীদ আর্মি অফিসারদের মৃত্যু প্রসঙ্গে ‘কিছু প্রাণী মারা গেছে’ বলে বিদ্রুপ করেন। এটা কিসের ইঙ্গিত?’
তিনি বলেন, ‘পিলখানার গেটে ঘটনার সময়ে যারা বিডিআর-জনতা ভাই ভাই বলে শ্লোগান দিয়েছিল তারা সবাই বিএনপির সন্ত্রাসী গডফাদার নাসিরউদ্দিন পিন্টুর ক্যাডার। এরাই হত্যাকারীদের পালানোর সুযোগ করে দেয়। কি কারণে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা খুনিদের উৎসাহ দিয়েছিল?’
হানিফ বলেন, ‘অতি সম্প্রতি নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির নৃশংস হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বেগম জিয়া বাস্তবতা বিবর্জিত কাণ্ডকজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেছেন। প্রকৃতঅর্থে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের আড়াল করতে খালেদা জিয়া এই বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাগর-রুনি নাকি সরকারের দুর্নীতির কথা জানতেন। তার কাছে যদি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আসলে কোন তথ্য থাকে তবে তা নিয়ে পুলিশকে সাহায্য করছেন না কেন?’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে দায়িত্বশীল আচরণ করুন, মনে রাখবেন বিরোধী দলের নেতার মুখে এ ধরনের কাণ্ডকজ্ঞানহীন মন্তব্য শোভা পায় না।’
হানিফ বলেন, ‘তিনি (খালেদা) আজ সাংবাদিক দরদী সেজেছেন। অথচ তার শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় ছিল। জাতীয় প্রেসক্লাবে ও রাজপথে তার পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে অসংখ্যবার সাংবাদিকদের নির্যাতন করেছেন তিনি। তার শাসনামলে ১৬ জন সাংবাদিককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। বহু দেশখ্যাত সাংবাদিকের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। তিনি ইটিভিকে নিষিদ্ধ করেছেন। দেশখ্যাত কলামিস্ট মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, সাংবাদিক সেলিম সামাদ, এনামুল হক চৌধুরী, প্রিসিলা রাজকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন।’
হানিফ বলেন, ‘আপনার (খালেদা) পুত্র তারেক রহমানের কর্তৃত্বাধীন হাওয়া ভবন থেকে তালিকা করে প্রগতিশীল ব্যক্তি, রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী আর মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন নির্মূলের নীলনকশা প্রণয়ন এবং তা বাস্তায়ন করা হতো। দেশবাসীর স্মৃতির মানসপট থেকে সেই সত্যকে কোনদিনই মুছে ফেলা সম্ভব হবে না।’
হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানই প্রথম ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি করেছিলেন। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী চৌধুরী তানভীর সিদ্দিকী ও ভারতের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতা এসেছে তারাই ট্রানজিট চুক্তি নবায়ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছেন, আপনাদের সময় শেষ। তাকে বলতে চাই, তিনি সময় দেবার কে? ভোট দেবে জনগণ। কে ক্ষমতায় যাবেন বা থাকবেন ঠিক করবেন আল্লাহ।’
‘খালেদা জিয়া দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে তা শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ রসিকতা হয়ে যায়’ বলেও মন্তব্য করেন হানিফ।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যিনি জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেন, যার ছেলেদের দুর্নীতি এফবিআই তদন্ত করে বের করে তার মুখে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শোভা পায় না।’