সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সাথেই সংলাপে বসতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে।
শনিবার বিকালে জামালপুর জেলা হাই স্কুল মাঠে ২০ দল আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে কাফফারা দিচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যর কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কাফফারা বিএনপিকে নয়, আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। দুর্নীতি-অপশাসন করছে। তার হিসেব যখন দিতে হবে তখন এ সরকারকে কাফফারা দিতে হবে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা অতীতে যেভাবে রাস্তা ঘাট বন্ধ করে আন্দোলন করেছিলেন। আবার আমাদেরকে সেভাবেই আন্দোলন করতে হবে। ঈদটা পার করেন। ঈদের পর সরকার পতনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। দলমত নির্বেশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, মহাজোট সরকার দুর্নীতিবাজ, চোর, খুনী সরকার। তারা দেশের জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। অন্যদিকে দেশের মানুষকে খুন করছে।
তিনি বলেন, তারা ঘন ঘন দুর্নীতির কথা বলে। কিন্তু তাদের মুখে দুর্নীতির কথা শোভা পায়না। কারণ তারা শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতুসহ বিভিন্ন খাত থেকে দুর্নীতি করে বিপুল পরিমান টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দুদককে হাতের মুঠোয় নিয়েছে।
ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই সরকার সংবিধান সংশোধন করেছে এমন মন্তব্য করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, সমস্ত প্রতিষ্ঠান আজকে বর্তমান প্রধানমনত্রীর পকেটে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুদক, শিক্ষাক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠান আজ তার পকেটে। আজকে মেধাবীরা চাকরি পায়না।
৫ জানুয়ারী দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত, ১৪৩ জন বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্পীকার কেউই নির্বাচিত নয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। হউক ঘরে বা বাইরে। আমরা র্যাব বানিয়ে দলীয় বা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করিনি। আর এ সরকার র্যাব দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। তাই এ বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন,আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মান সম্মান নিয়ে বিদায় হওয়ার সময় এসেছে। ভালোয় ভালোয় সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। উপজেলা নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। সে নির্বাচনে ও তারা কারচুপি করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই তাদের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সরকারের করা বিভিন্ন আইনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করতে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। টক শোতে সরাকরের নির্দেশে বিষয়বস্তু আলোচনা করতে হয়। কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না।
আওয়ামী লীগকে জঙ্গি ও রাজাকারের দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ঘরেই রাজাকার ও জঙ্গি রয়েছে।মাওলানা নূরুল ইসলাম ছিল কুখ্যাত রাজাকার। তাকে আব্দুস সালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে মনোনায়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে ছিল কুখ্যাত রাজাকার।এছাড়া শায়েখ আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতা মির্জা আযমের ভগ্নিপতি। আওয়ামী লীগই জঙ্গিবাদ ও রাজাকারদের লালন করে।
জোট সর্ম্পকে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপিকে ভয় পেয়ে সরকার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। লোভ লালসা দেখিয়ে কাউকে কাউকে ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাতে লাভ হবে না। জোট ভাঙবে না। জোট অটুট আছে এবং থাকবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাবেক উপমন্ত্রী সিরাজুল হক, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সদস্য নীলোফার চৌধুরী মনি, বিএনপি নেতামোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অ.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মোহম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দীন মতিন, জাগপার সভাপতি সফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের চেয়ারম্যান গরীবে নেওয়াজ, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ।