১৭টির মধ্যে ১৪টি আন্তর্জাতিক রুটেই লোকসান দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অন্যদিকে অভ্যন্তরীন তিনটি রুটেও লোকসান গুণতে হচ্ছে বিমানকে।
সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে এ তথ্য জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।
স্বতন্ত্র সদস্য মো. ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিমানের লোকসান দেওয়া রুটগুলো হচ্ছে লন্ডন, রোম, আবুধাবী, দোহা, দুবাই, জেদ্দা, রিয়াদ-দাম্মাম, কুয়েত, হংকং, ব্যাংকক, কোলকাতা, দিল্লী, কাঠমান্ডু ও করাচি।
মন্ত্রী জানান, অভ্যন্তরীণ রুটের মধ্যে লোকসানে রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার।
মন্ত্রী আরো জানান, মাসকাট, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালমপুর এই তিনটি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে।
নুরুল ইসলাম বিএসসির প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ফ্লাইট সিডিউল ঠিক থাকে না। এর কারণ হচ্ছে, উড়োজাহাজ ও খুচরা যন্ত্রাংশের স্বল্পতা।’
মন্ত্রী জানান, বিমানের সিডিউল ঠিক না থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে, উড়োজাহাজের স্বল্পতা। এর পাশাপাশি খুচরা যন্ত্রাংশের স্বল্পতাও রয়েছে। বর্তমানে ১৪টির মধ্যে ১০টি উড়োজাহাজই পুরনো হওয়ায় ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দেয়। এর ফলে পরিকল্পিত সিডিউলকে ভেঙ্গে দেয়।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন একটি উড়োজাহাজের ওপর দুই বা ততোধিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা থাকে। কোন একটি ফ্লাইটের যান্ত্রিক ত্রæটির জন্য বিলম্ব ধারাবাহিকভাবে আরো ফ্লাইটের বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর বাইরে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইট সিডিউল ঠিক রাখা যায় না।
মন্ত্রী জানান, ফ্লাইট সিডিউল ঠিক রাখার লক্ষ্যে বিমান নতুন প্রজন্মের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে বিমানের একটি চুক্তি হয়েছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে ১০টি উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত হবে।
মো. শহিদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, গত বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫৭ হাজার ১৭৮টি ফ্লাইট উঠানামা করেছে। এসব ফ্লাইটে ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ জন যাত্রী বহন করা হয়েছে।
একই সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত অর্থ বছরে বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ বাবদ ৫৯৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় হয়েছে।
নাছিমুল আলম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল, কারপার্কিং, রানওয়ে-১৪, রাডার গেট, হ্যাঙ্গার গেট, ভিভিআইপি কমপ্লেক্সসহ ফ্লাইং ক্লাব গেট পয়েন্টে ১২২টি ক্যমেরা রয়েছে। এসব ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক রেকর্ডিং ও তদারকির ব্যবস্থা রয়েছে।
এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিমানমন্ত্রী জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিমান যোগাযোগের হাব হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কর্তৃক ‘এক্সটেনশন অব এভিয়েশন ফয়েল হাইড্রান্ট সিস্টেম এট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাখা হয়েছে।
হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে বিমান চলাচলের অনুপযোগী। রানওয়েসহ জমির পরিমাণ ১১০ দশমিক ৭০ একর। আবাদী ৭০ একর জমি ইজারা দেওয়ার জন্য এবার সর্বোচ্চ পৌণে দুই লাখ টাকা দর পাওয়া গেছে।
ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, পর্যটন করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৫টি হোটেল, মোটেল ও রেস্তোঁরা রয়েছে। এর মধ্যে করপোরেশন সরাসরি ২১টি পরিচালনা করছে। অপর ১৪টি বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, ২০০১-২০০২ থেকে ২০১০-২০১১ অর্থবছর পর্যন্ত ১০টি অর্থবছরে আয় হয়েছে ১৮৯ কোটি ৬৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এর মধ্যে অপারেটিং ব্যয় হচ্ছে ১৫১ কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
এর আগে বিকেল ৫টায় স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে চলতি অধিবেশনের ১৭তম কার্যদিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।