মালয়েশিয়ায় ভিন্ন রীতির ঈদ ও কোরবানি

মালয়েশিয়ায় ভিন্ন রীতির ঈদ ও কোরবানি

রাজ্যের যত আনন্দ-ফুর্তি তা যেন কেবলই বাঙালির মননে, বাংলার উৎসবে-পার্বণে! বিশেষ করে ঈদে বাংলাদেশের মতো আর কোথাও হয়তো এত আনন্দ হয় না । যান্ত্রিক জীবনে বাঁধা প্রতিটা উন্নত দেশে উৎসব আসে-যায় খানিকটা নীরবেই।

পরিবার-পরিজনের বাইরে অনেকগুলো ঈদ কাটিয়েছি। প্রতিটা ঈদই একটু ভিন্ন আমেজ নিয়ে আমার সামনে এসেছে। ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অন্দর থেকে দেখেছি নিগুঢ়ভাবে । জীবন গড়ার অভিলাষে উচ্চশিক্ষার্তে বেশ কিছুদিন যাবত মালয়েশিয়াতে আছি। সেই সুবাদে আমাকে ঈদ কাটাতে হচ্ছে এখানে। এখানকার ঈদ উদযাপন, ঈদের আগমনী বার্তা কিংবা ঈদ দিনের সংস্কৃতি আমাদের দেশের চেয়ে সম্পূর্ণ অন্য রকম । আমাদের দেশের মতো এখানে কোনো ঈদগাহ নেই । বিশাল বিশাল মসজিদ রয়েছে এলাকাভিত্তিক । আর ঈদের নামাজ পড়া হয় সেই মসজিদগুলোতেই । প্রতিটা মসজিদের ভেতরে আছে সুদর্শন সুউচ্চ কাঠের দোতলা মিম্বর । ইমাম সাহেব ঐ মিম্বরে উঠে ঈদের খুতবা পেশ করেন । আরবির সাথে সাথে তাঁদের দেশি ভাষার তর্জমায় খুদবা পাঠ করা হয় । নামাজের আগে অত্যন্ত সীমিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ কথায় শেষ হয় ইমাম সাহেবের বয়ান । নেই অতিরিক্ত বাগাড়ম্বর।

আমাদের দেশের মতো এখানে ঈদের আগে গরু-ছাগলের বিশাল হাট বসে না । সপ্তাহে দু দিন বসে হাট এলাকাভিত্তিক । একদিন সকালে, একদিন বিকেলে। সকালের হাটকে বলা হয় পাসার এবং বিকেলের হাটকে বলা হয় পাসার মালাম । ঈদের আগে বসা হাটগুলোও ঠিক অন্যান্য সময়ের মতোই । বাড়তি কোনো রং ছড়ায় না । এখানে বাড়ি বাড়ি কিংবা ঘরে ঘরে কোরবানি দেওয়া হয় না । দেখানো হয় না অর্থের দাম্ভিকতা । তাছাড়া এত সময়ই বা কোথায় ! আবার কোরবানির ঈদে সরকারি ছুটি থাকে মাত্র এক দিন। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অনেক কোম্পানি ঈদের দিনও খোলা থাকে। ঐসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার বাঙালি শ্রমিক কাজ করেন । তবে ঈদের দিন রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় এবার সবারই মিলল ঈদের ছুটি।

এখানে কোরবানি দেওয়ার রীতিও আমাদের দেশের থেকে আলাদা । মসজিদে সরকারিভাবে কোরবানি দেওয়া হয় । সেই সাথে অনেক সময় এলাকার ধনী (স্থানীয় ভাষাতে তাঁদের দাতো বলা হয়) ব্যক্তিরা দু-চারটা গরু মসজিদে নিয়ে আসেন। এখানেই কোরবানি দিয়ে উপস্থিত সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয় । হয়তো কেউ শখের বসে খাসি কোরবানি দিয়ে থাকেন। তাও হাতে গোনা দু-একজন । কোরবানির পশুগুলো নিয়ে আসা হয় বিভিন্ন ফার্ম থেকে ।

তবে বাঙালি-আধিক্য এলাকাগুলোতে ঈদের আমেজ একটু ভিন্ন। কুয়ালালামপুরে পাসার সেনি নামে একটা জায়গা আছে, যেটিকে বাংলা মার্কেট বললে এক নামে সবাই চেনে। বাঙালি স্বাদের রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে হেন বাংলাদেশী পণ্য নেই যা পাওয়া যায় না । ঈদের দিন সকাল থেকে শয়ে শয়ে বাঙালি ওখানে জমতে থাকে । সারাদিন নানা অনুষ্ঠান হয় । মাইকে বাংলা গান বাজে। মিনি কনসার্টের আয়োজনও থাকে। আয়োজক-দর্শনার্থী অধিকাংশই খেটে খাওয়া শ্রমিক। স্বদেশে পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ না করার দুঃখ ভুলে ক্ষণিক আনন্দ নেয় সবার সাথে মিলে ।

আন্তর্জাতিক