দুদকের মামলায় মওদুদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

দুদকের মামলায় মওদুদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

গুলশানে এক বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক আয়তনের একটি সরকারি বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের ভাই মনজুর আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

রোববার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ জহুরুল হক এ আদেশ দেন। এদিন এ মামলাটিতে দাখিল করা চার্জশিট আমলে নেন আদালত। শুনানির সময় মওদুদ আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২২ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন আদালত।image_98215_0

গত ২৬ মে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ ঢাকার সিএমএম আদালতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ।

মামলায় বলা হয়, ‘১৯৬০ সালের ২৪ আগস্টে গুলশান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের (হোল্ডিং নং ১৫৯) প্লটটি পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসানকে হস্তান্তর করে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক)।

পরবর্তীতে লিজ গ্রহিতার প্রত্যার্পণ সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তার স্ত্রী মিসেস ইনজে মারিয়া প্ল্যাজ (অস্ট্রেলিয়ান) এর নামে ওই প্লটটি ৬৫ সালে লিজ দলিল হিসেবে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়।

সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত ‘মিনিস্ট্রি অব কেবিনেট অ্যাফেয়ার্স’ জারির আগেই মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও  যুদ্ধের পর পরই তার স্বামী মো. এহসানের দেশত্যাগের কারণে উক্ত প্লটটি পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।

মামলায় বলা হয়েছে, ‘মওদুদ আহমদ উক্ত সম্পত্তি আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ প্রদত্ত আম মোক্তার নামার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দাবিদার দেখানোর জন্য ৭৩ সালের ২ আগস্ট একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করেন এবং তা তার সুবিধামতো সময়ে ব্যবহার করেন।

পরবর্তীতে নানা কৌশলে বাড়িটি দখলে নিয়ে নিজেকে ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজের ভাড়াটিয়া হিসেবে দেখিয়ে উক্ত বাড়িতে বসবাস করে আসছেন তিনি।’

এজাহারে আরো উল্লেখ রয়েছে, ‘এ নারীর (ইনজে মারিয়া) স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আসার কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও মওদুদ আহমদ তার পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তা দেখান।

পরবর্তীতে ৭৮ সালে তৎকালীন সরকারে যোগদান করে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী এবং ৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নিজের ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে উক্ত বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হোল্ডিং নং ১৫৯নং এর  প্লটটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা  দেখিয়ে বরাদ্দ নেন তিনি। ৮০ সালে প্লটটি রেজিস্ট্রি করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ইনজে মারিয়া কর্তৃক জনৈক মহসিন দরবার বরাবরে একটি আমমোক্তার নামা সম্পাদন দেখানো হয়। ইনজে মারিয়া ১৯৮৫ সালে মারা যান। এটা জানা সত্ত্বেও উক্ত মহসিন দরবার নামীয় ব্যক্তিকে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আমমোক্তার হিসেবে ৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদ বরাবর চুক্তি সম্পাদনা দেখানো হয়।’

এজাহারে বলা হয়েছে, ‘মওদুদ তার ভাই মনজুর আহমদকে অবৈধভাবে উক্ত বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।’

তবে মওদুদ আহমেদের পক্ষে দাবি করা হয়, বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি নয়, ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আর মওদুদ আহমদের ভাই ব্যক্তি মালিকের কাছ থেকেই বাড়িটি ক্রয় করেছেন। মনজুর আহমদ বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন।

অন্যান্য