দল গুছিয়ে শিগগির রাজপথে নামবো: খালেদা জিয়া

দল গুছিয়ে শিগগির রাজপথে নামবো: খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি এখন দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। সরকার সংলাপে এগিয়ে না এলে শিগগির দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নামবে তার দল ও জোট।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রকৌশলীদের মহাসমাবেশে লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমরা একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা দেশে অশান্তি, সংঘাত, অস্থিরতা এবং রাজপথের উত্তাল আন্দোলনে সহসা যেতে চাই না। তবে সব পথ বন্ধ করে দিলে রাজপথ বেছে নেয়া ছাড়া এদেশের জনগণের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকে না।”image_98090_0
খালেদা জিয়া বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি সংলাপের জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরা এখন আমাদের সংগঠনগুলোকে প্রস্তুত ও বিন্যস্ত করছি। অন্যান্য সমাজশক্তিগুলোকে সমন্বিত করছি। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছি। তাদের মতামত শুনছি।”
তিনি বলেন, “এই পর্বের পর সংলাপের উদ্যোগ না নিলে জনগণের দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমাদেরকে রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে।” সে আন্দোলনে প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীদেরও নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা বলেন, “আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ওয়াদা নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যাননি। তিনি গত ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এরপরেও আলোচনা চলবে এবং একটি সমাঝোতা হলে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন করা যাবে।  এখন সেই অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তিনি আলোচনা ও সংলাপে বসতে অস্বীকার করছেন। আমরা এখনো এবং আমি আজ আবারো তাদেরকে আলোচনা ও সংলাপের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমি অনেকবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। দেশের মানুষ আস্থা রেখে ও ভালোবেসে আমার ওপর সে দায়িত্ব অর্পণ করেছে কয়েকবার। এসব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি ও ত্রুটিগুলোও আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তার আলোকে দেশের বিরাজমান সমস্যা-সংকটের নিরসন ও একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা হাতে নিয়েছি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশের সব মেধা, যোগ্যতা, সামর্থ ও কর্মশক্তিকে আমরা এক মোহনায় মেলাবো।”
সরকারের নানা ব্যর্থতা উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, “সমস্যা-সংকুল, পিছিয়ে থাকা একটি উন্নয়নশীল দেশ আমাদের। এই দেশের উন্নতি আমাদের করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোই আজো আমরা পূরণ করতে পারিনি স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও। এগুলো করতে হবে। তার পাশাপাশি উন্নয়ন ঘটাতে হবে শিক্ষায়-প্রশিক্ষণে, কৃষিতে-শিল্পে ও উৎপাদনে। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায়, নগরায়নে, বিদ্যুতে, খনিজ সম্পদ আহরণে, সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা বিষয়ে উন্নয়ন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “সমস্যা-সংকট নিরসনের গতিকে দ্রুততর করতে হবে। এরজন্য আমাদেরকে গড়তে হবে জ্ঞান ও বিজ্ঞাননির্ভর প্রযুক্তিমুখী সমাজ। সেই উন্নয়ন ও নির্মাণের আসল কারিগর আপনারাই।  যে-কোনো উন্নয়নকেই হতে হয় বাস্তবসম্মত, যুগের চাহিদা মাফিক এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক। এগুলো নির্ণয় ও নিরূপনের জন্য দেশের জনগণই হচ্ছেন প্রকৃত শিক্ষক। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই কারণেই প্রকৌশলীদের শুধু টেবিল-চেয়ারে বসে কাজ না করে মাঠে-ময়দানে গিয়ে জনগণের সঙ্গে মেশার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমিও আজ আপনাদেরকে সে কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।”
খালেদা বলেন, “বাংলাদেশে আজ আবারো উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অনিরাপত্তা, অস্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস, আইনের শাসনের ও ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতিতে মানুষ আজ উৎকণ্ঠিত, অস্থির ও জর্জরিত। জনগণের ভোটাধিকার লুণ্ঠিত।”
তিনি বলেন, “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকের বেশি এবং প্রায় বিনা ভোটে বাদবাকি সদস্যদের নিয়ে এক অনির্বাচিত সংসদ গঠন করা হয়েছে। সেই প্রহসনের নির্বাচনে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দলই অংশ নেয়নি। ফলে তথাকথিত সংসদে কার্যত কোনো বিরোধীদলও নেই। অনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা মিলে একটি সরকার গঠন করেছে। এই সরকার নির্বাচিত নয়। এই সরকার জনপ্রতিনিধিত্বশীল নয়। এই সরকার বৈধ নয়। এই সরকার গণতান্ত্রিক নয়। এই সরকারের উপর জনগণের কোনো আস্থা, সমর্থন ও সম্মতি নেই। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব ও জবাবদিহিতাও নেই। তারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছে। ফলে দেশে গণতন্ত্রও নেই।”
লিখিত বক্তব্যে খালেদা বলেন, “গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়নের পরিবেশ থাকে না। উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়ে। আধুনিক বিশ্বে কোনো জবরদস্তির সরকার, অবৈধ সরকার বা স্বৈরাচারি সরকার দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করতে পারেনা। উন্নয়নের পরিবেশ তারা নিশ্চিত করতে পারেনা। তারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে। জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়। তারা লুণ্ঠন ও দুর্নীতির মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে। দেশের সম্পদ বাইরে পাচার করে দেয়। বাংলাদেশেও ঠিক তাই হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, বাংলাদেশ যতটুকু অগ্রসর হয়েছে, তার বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে। এখন সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে স্বৈরশাসন ব্যবস্থা ফিরে আসার কারণে দেশ আবারো পিছিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের গতি স্তব্ধ হয়ে গেছে। কাজেই উন্নয়নের স্বার্থে, ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য বাসযোগ্য, নিরাপদ একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যেই আমাদেরকে আজ আবারো দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।কারণ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়নের সুষ্ঠু ও উপযোগী পরিবেশ ফিরে আসবে না।মানুষের মধ্যে আজ হতাশা ও অস্থিরতা। সারাদেশের রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে এবং কুইক রেন্টালের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন মার খাচ্ছে। কারখানা বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকেরা বেকার হচ্ছে। গড়ে উঠছে না  নতুন কল-কারখানা। কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। নতুন তৈরি করা এপার্টমেন্টগুলো বিক্রি বা ভাড়া হচ্ছে না।”
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শেয়ার বাজার লুট করে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো ক্ষমতাসীনদের মতদপুষ্টরা লুটপাট করে খাচ্ছে। অর্থনৈতিক অঙ্গনে একের পর এক বিরাট বিরাট দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির ঘটনা সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। আর্থিক শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর বৈদেশিক অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পাশের হার বাড়িয়ে দেখাতে গিয়ে শিক্ষার মানকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে তরুণ সমাজ বিপদগামী হচ্ছে। দখল, দলীয়করণ ও সশস্ত্র সংঘাতে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে। পরিস্থিতির এতো অবনতি হয়েছে যে, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং সেন্টার খুলে শিক্ষকদেরকে পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সংবাদপত্রে তার সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশের পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।  ব্যাপক চাঁদাবাজিতে কেউ শান্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছে না। বাংলাদেশকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার এক অশুভ সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে।  রানা প্লাজাসহ ধারাবাহিক বিভিন্ন ট্রাজেডি পোশাক শিল্পে তৈরি করেছে অস্থিরতা। কর্মজীবীদের ভবিষ্যত করেছে অনিশ্চিত।”
খালেদা অভিযোগ করেন, “দেশের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। নীতিমালার নামে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সংবাদ-মাধ্যম। সাংবাদিকরা নিহত, নির্যাতিত ও কারারুদ্ধ হচ্ছেন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আপনাদের সংগঠন এ্যাবের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে দীর্ঘদিন বিনাবিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। কারণ, একটি জনপ্রিয় পত্রিকার সাহসী সম্পাদক হিসাবে তিনি অন্যায়, অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর সম্পাদিত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। অন্যায় কাজে সরকারের বেআইনি নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। তারা হত্যা, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মানুষের ওপর অত্যাচারসহ বিভিন্ন ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার আজ চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে। দলীয়করণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনপ্রশাসন।  বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নগ্ন দলীয়করণ ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপে ভূলুণ্ঠিত। মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। এখন আবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা অবৈধ ও অনির্বাচিত সংসদের হাতে নেয়ার উদ্যোগ চলছে।”
খালেদা বলেন, “গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগ যখন একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করেছিল, তখন উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে দেয়া হয়েছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অসদাচরণের দায়ে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা তার নিজের হাত থেকে বিচার বিভাগের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান প্রবর্তন করেছিলেন।  সেই ক্ষমতা আজ আবার অনির্বাচিত অবৈধ সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হচ্ছে। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরো খর্ব হবে। ন্যায়বিচারের সুযোগ আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে।”
তিনি বলেন, “দেশে নাগরিকদের কোনো অধিকার নেই। সভা-সমাবেশ প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারী কায়দায় বন্দী করা হচ্ছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমের সুযোগও রাখা হচ্ছে না। শাসক দলের লোকেরা অবাধে আইন ভেঙে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সশস্ত্র উপদলীয় সংর্ঘষ ও সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের ধরা হচ্ছে না। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করে মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। আর মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে জেল ভরে ফেলা হচ্ছে। কথায় কথায় চলছে হামলা-মামলা-গ্রেফতার-নির্যাতন।অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর গুম-অপহরণ, হত্যা-নির্যাতনের কোনো বিচার ও তদন্ত পর্যন্ত হচ্ছে না। সব মিলিয়ে দেশে চলছে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এক গুমোট পরিবেশে বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সমাজের সবখানে দুর্বৃত্তের শাসন ও ভীতির রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। একের পর এক লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হচ্ছে সম্মানিত নাগরিকদের। দেশে-বিদেশে কৃতিত্বের জন্য যারা সম্মান বয়ে এনেছেন, তাদেরকে পর্যন্ত হেনস্তা করা হচ্ছে। এসব কারণে কেউ কোথাও স্বস্তিতে ও নিরাপদে নেই। দেশে সংখ্যালঘুসহ কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরই জান-মালের নিরাপত্তা নেই।”
খালেদা জিয়া বলেন, “এই অস্বাভাবিক অবস্থা চলতে পারে না। সংবিধান, রাষ্ট্র, জাতীয় ইতিহাস, জনগণের জীবন-জীবীকা ও অধিকার আজ তছনছ করা হচ্ছে। যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী এ দেশের মানুষ তা মেনে নিতে পারে না। এ অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে শুধু বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়বে। একটি জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার যে-ভাবে স্বেচ্ছাচারী শাসন চালিয়ে যাচ্ছে, যে-ভাবে গণতান্ত্রিক ও উদারনৈতিক রাজনৈতিক ধারাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে, তাতে কেবল উগ্রবাদী ও চরমপন্থী শক্তির উত্থান ও বিস্তারের আশংকাই বাড়তে পারে। এতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।”
প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বিএনপি নেত্রী বলেন, “এসব কারণেই আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। এ সংগ্রাম সবার। এ সংগ্রামে সবাইকে শামিল হতে হবে।”
লিখিত বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা বারবার শান্তির কথা বলছি। আওয়ামী লীগের মত অশান্তি চাই না, এতে বিশ্বাসও করি না। প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও সরকারের মন্ত্রীদের লুটপাট সবাই দেখছেন। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। তাই সর্বস্তরের মানুষকে বলবো আসুন খুনি, জালেম ও অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করি। আশা করি সবাইকে পাশে পাবো।”
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ ন হ আখতার হোসেন পিইঞ্জ’র সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, সম্মিলিত পেশাজাবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
প্রকৌশলীদের মধ্যে প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ, সৈয়দ মুনসিফ আলী, মোহসেন আলী, গোলাম মাওলা, খালিদ হোসেন চৌধুরী, একেএম জহিরুল হক, ড. মোহাম্মদ ইকবাল, হেলাল আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভা হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজনীতি