নির্বাচন কমিশনকে যে আইন দেওয়া হয়েছে, সে আইনের যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের ভয় করলে হবে না। ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান প্রণেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিলে বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়, তবে নির্বাচন সংক্রান্ত যে আইন আছে তার প্রয়োগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রুগ্ন রাজনীতি দিয়ে গণতন্ত্র আশা করা যায় না।’ রুগ্ন রাজনীতি বলতে তিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নির্বাচনে কালো টাকার খেলা, অস্ত্রের মহড়াকে বুঝিয়েছেন।
ড. কামাল বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় দুঃখ, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। তবে ৪০ বছরের অভিজ্ঞা থেকে বলা যায়, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাতের পথ বেছে না নিয়ে কিভাবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায় সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ে এখনো দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে। এ ব্যাপারে বর্তমান কমিশনকে বলতে হবে এবং উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো দ্বিধা বা ভয় যেন না করে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশন কি মাগুরা মার্কা নির্বাচনের কলঙ্ক নিয়ে বিদায় নেবে, নাকি নারায়ণগঞ্জের সুনাম নিয়ে বিদায় নেবে তা তাদের নিরপেক্ষতায় প্রমাণ করবে।’
বৈঠকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে একই মঞ্চে নিয়ে আসা বড় কঠিন। সেজন্য সব আইন প্রয়োগ করা যায় না। আমরা যখন শপথ নিয়ে একটা আসনে বসি তখন সব কথা বলাও যায় না।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন বলেন, ‘আগে নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটাররা স্বর্তস্ফূতভাবে যেতে পারতেন না। কিন্তু এখন সে মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভেড়ার ওপরে ষাড় পড়লে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। আমাদের এই চেয়ারে বসে সব সময় সব কথা বলা যায় না।’
সুজনের সহ-সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য এএসএম শাহজাহান প্রমুখ।
সুজন নবনির্বাচিত কমিশনের কিছু ত্রুটি এবং নবনির্বাচিত কমিশনের কাছে কিছু প্রস্তাবনা ও নির্বাচন কমিশনের বর্তমান করণীয় দিক সম্পর্ক আলোচনা করেন।
বক্তারা বলেন, অতীতে কোনো কমিশনই তিন জনের বেশি সদস্য ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এর সদস্য ৫ জন হওয়ায় সমন্বয়হীনতার আশঙ্কা করছে সুজন।
বক্তারা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া নতুন ইসি’র সবাই অপরিচিত। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন ছাড়া অন্য ৪ জন কমিশনারই সচিব পদমর্যাদার নিচে হওয়ায় কমিশনের গুরুত্ব খর্ব হয়েছে বলে ধারণা করেন সকলে।
সুজনের দেওয়া প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, দল থেকে একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে হবে। তাছাড়া আদালত কর্তৃক পলাতক বলে ঘোষিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ অযোগ্য বলে গণ্য করতে হবে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম প্রর্বতনের প্রস্তাব এবং নির্বাচনের ব্যয়সীমা ১৫ লাখের পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাবও করে সুজন। এছাড়া কোনো নারী সদস্যকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানানো হয়।
করণীয় সম্পর্কে বক্তারা বলেন, নিবন্ধিত দলের কোনো বিদেশি শাখা থাকতে পারবে না। মূল নির্বাচনীয় আইন আরপিও বাংলা ভাষায় রচিত হতে হবে।